আবুধাবি টি-টেন লিগে খেলতে গিয়ে আইফোন উপহার নিয়েছিলেন নাসির। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাননি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্তে আচরণবিধি ভঙ্গ করার অভিযোগ স্বীকার করার পর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হলেন তিনি।
আইসিসি’র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নাসিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী কোডের তিনটি ধারা ভঙ্গের অভিযোগ এনেছিল আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট আকসু। সবকটিই নাসির মেনে নিয়েছেন। তাই ২ বছর থেকে ৬ মাস স্থগিত সাজা শোনানো হয়েছে এই ক্রিকেটারকে। এই দুই বছরে আইসিসির বিভিন্ন শর্ত মেনে চলতে হবে নাসিরকে। সেটা করলে তার শাস্তিও কমে যাবে ৬ মাস। তখন ১৮ মাস পর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিল ক্রিকেটের দুয়ার খুলে যাবে তার জন্য। নইলে পুরো দুই বছরই সাজা ভোগ করতে হবে তাকে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছেন আইসিটি কোডের ২.৪.৩ ধারা অনুসারে, নাসির ৭৫০ ডলারের উপহারের রসিদ আইসিসির নিয়োগকৃত দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাকে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২.৪.৪ ধারা অনুযায়ী, দুর্নীতির প্রস্তাব পাওয়ার বিস্তারিত তথ্য দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাকে জানাননি। ২.৪.৬ ধারা অনুসারে, সম্ভাব্য দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তে কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়াই তদন্ত কর্মকর্তাকে সহায়তা করেননি।
ঘটনাটি মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টেন লিগকে কেন্দ্র করে। ২০২০-২১ আসরে ঘটা এই কাণ্ডের জন্য নাসিরসহ মোট আট জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তারা সবাই পুনে ডেভিলস ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
জানা গিয়েছিল, যারা অভিযুক্তদের প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন তারা আকসুর তালিকায় থাকা শীর্ষ ও পরিচিত অপরাধী। তারা ডেভিলস ক্যাম্পে ম্যাচের ফলাফল পরিবর্তনে প্রভাব রাখার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত যদিও তাদের সব অপচেষ্টা আকসুর কারণে ভেস্তে গেছে।
সেবার নাসির পুনের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময়ই পুনে শেষবার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে ২০১৮ সালে সর্বশেষ খেলা নাসির ছাড়া বাকি অভিযুক্তরা হলেন যৌথ মালিক কৃষাণ কুমার চৌধুরী এবং পারাগ সাংভি, দুজন ঘরোয়া ক্রিকেটার রিজওয়ান জাভেদ ও সালিয়া সামান, ব্যাটিং কোচ আসার জাইদি, সহকারী কোচ সানি ঢিলন, টিম ম্যানেজার শাদাব আহমেদ।
অভিযুক্তদের মধ্যে হাইপ্রোফাইল নামটি ছিল ৩১ বছর বয়সী নাসির। তার বিরুদ্ধে আনা অন্যতম অভিযোগটি হলো, ৭৫০ মার্কিন ডলারের উপহার পেয়েও সেটির বিষয়ে আকসুকে কিছুই জানাননি তিনি।
যৌথ মালিক সাংভির বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল ম্যাচের ফলের ওপর বাজি ধরার চেষ্টা। জাইদি, জাভেদ ও ঢিলনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগটি ছিল ম্যাচ পাতানোর।
অভিযুক্তদের মধ্যে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও টিম ম্যানেজার শাদাব ছাড়া বাকি ৬ জনকে প্রাথমিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একই সময়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দুজনকে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পেলেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশের জার্সিতে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্তু ১১৫ ম্যাচ খেলতে নেমেছেন নাসির। ৩৯ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি করেছেন ২৬৯৫ রান।
তারপর থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন নাসির। সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলেছেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে।
নাসির আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাবেন ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিল থেকে।