বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম’ বিষয়ে বৃহস্পতিকার সকালে হোটেল রেডিসন ব্ল চট্টগ্রাম বে ভিউ হোটেলে এবং অনলাইন প্লাটফর্ম ‘জুম’-এও গ্রাহক উপস্থিতিতে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুনানিতে গ্রাহকরা টেলিযোগাযোগ সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার সুম্মখীন হয়েছেন তা তুলে ধরেন এবং কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ ক্রমান্বয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। গণশুনানিতে অংশে নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৮৪৮ জন, এর মধ্যে সশরীরে ১৮২ জন, অনলাইনে ৯৪ জন এবং অন্যান্য ১৭ জন অংশ নেয়।
গণশুনানি কমিটির সভাপতি ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর শিকদার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে স্বাগতে বক্তব্য প্রদান করেন কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌঃ মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিটি গণশুনানি যে কোনা প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ায় এবং গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতে আরো কতটুকু উন্নয়ন করা যায় সে বিষয়ে কাজ করবে বিটিআরসি।
তিনি আরো জানান, অক্টোবর ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬২ লাখ, মোবাইল সিম গ্রাহক সংখ্যা ১৮ কোটি ১৬ লাখ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ১০৪.১৭ ভাগ এবং নভেম্বর ২০২২ সাল ব্যান্ডউইথ তথা ডাটার ব্যবহার হয়েছে ৪,৪১৯ জিবিপিএস।
গণশুনানি সংক্রান্ত উপস্থাপনা করেন সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহপরিচালক ব্রিঃ জেঃ মোঃ নাসিম পারভেজ। এ সময় তিনি উপস্থিত সকলের অবগতির জন্য বিগত ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত গণশুনানির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে করেন।
তিনি জানান, গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেট গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে গত ১ বছরে বিটিআরসি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে এবং ইন্টারনেটের গতি যাচাই করতে ড্রাইভ টেস্ট ডিভাইস ক্রয় করা হয়েছে। কল ড্রপ নিরসনে কলড্রপ ফেরতের জন্য এ বছর নতুন নির্দেশনা চালু এবং প্রতিটা কলড্রপে যা খরচ হয় তার তিনগুণ ফেরত দেওয়ার বিধান চালু করা হয়েছে।
জাওয়াদুল করিম নামে বেসরকারি চাকরিজীবী ২০ টাকা রিচার্জ সীমা না রাখার দাবি জানান। জবাবে সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনা: মো: নাসিম পারভেজ বলেন, মোবাইল অপারেটররা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে গ্রাহকরা ১০ টাকা তেমন বেশি রিচার্জ করেন না। এ বিষয়ে পুনরায় বিচার বিশ্লেষণ করে যদি ১০ টাকা রিচার্জে গ্রাহক সাড়া মিলে, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মোবাইল অপারেটরদের দুর্বল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে অপর এক গ্রাহকের অভিযোগের জবাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনা: মো: এহসানুল কবীর বলেন, সকল অপারেটরদের বেশকিছু টাওয়ারের নেটওয়ার্ক দুর্বলতা ইতোমধ্যে চিহ্ণিত করা হয়েছে এবং অপারেটরদেরকে সেসব টাওয়ারে নেটওয়ার্কে গতি বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সায়েম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রিচার্জ করলে অটোমেটিক ডাটা ও বান্ডেল ক্রয় হয়ে যায় ।
জবাবে সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহপরিচালক ব্রিঃ জেঃ মোঃ নাসিম পারভেজ এ বিষেয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
আশিক চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থী টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন নতুন সেবা চালুর মাধ্যমে চাকরির ক্ষেত্র বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চান।
জবাবে লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেইন বলেন, বিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সেবা চালু হচ্ছে এবং বিটিআরসি‘র লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এ খাতে চাকরির সুযোগও বাড়ছে। আইটি বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল আলম চৌধুরী অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স চালুর কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক লেঃ কর্ণেল আউয়াল উদ্দীন আহমেদ নতুন করে অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স চালুর কার্যক্রমের আশ্বাস দেন।
আসিফুল নামে এক শিক্ষার্থী ডাটা শেষ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পে ফর ইউজ চালু হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। জবাবে সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিঃ জেঃ মোঃ নাসিম পারভেজ বলেন, গ্রাহকের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই পে ফর ইউজ সর্বোচ্চ পাঁচ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া, গ্রাহকের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ডাটা প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। ফাইভজি চালুর বিষয়ে এক গ্রাহকের প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: এহসানুল কবীর বলেন, সকল অপারেটর ফাইভজি চালুর কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছে। তানিম খান নামে এক ব্যক্তি সিম রিপ্লেসমেন্ট হলে পুরাতন গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
জবাবে সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনা: মো: নাসিম পারভেজ বলেন, সিম একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রিপ্লেসমেন্ট এর আগে গ্রাহককে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং ওয়েবসাইটে নোটিশ দিয়ে এ বিষয়ে গ্রাহককে অবগত করা হয় । গ্রাহক সাড়া না দিলে নির্দিষ্ট সময় পর সেটি রিপ্লেসমেন্ট সিম হিসেবে গণ্য হয়।
গণশুনানিতে উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারী ও সুধীজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, গণশুনানিতে যেসব অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো বিটিআরসির পরবর্তী কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।
গণশুনানিতে প্রশ্নের মাধ্যমে অনেক অজানা বিষয় গ্রাহক জানতে পারেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষমাত্রা নিয়ে বিটিআরসি কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে পর্যায়ক্রমে অন্য বিভাগেও গণশুনানি আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি। গণশুনানির শেষভাগে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর শিকদার সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লে কর্ণেল এস এম রেজাউর রহমানের সঞ্চলনায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, বিটিআরসি’র লাইসেন্সধারী টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ, সশরীরে এবং অনলাইনেযুক্ত টেলিযোগাযোগ সেবা গ্রহীতার অংশগ্রহণে গণশুনানিতে মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান যথা-কলড্রপ ও বিভিন্ন প্যাকেজ (ভয়েস, ডাটা বান্ডল) এর মূল্য এবং ইন্টারনেট সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ, প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেলিকম সেবাপ্রদানকারী লাইসেন্সিদের সেবা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ অর্ন্তভূক্ত ছিল। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো: দেলোয়ার হোসাইন, চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসেনর কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিটিআরসির উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।