ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ৫ম শিল্প বিপ্লবের সংযুক্তির মহাসড়কের নাম ফাইভ-জি প্রযুক্তি। অন্যদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তি হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথ বেয়ে আমরা ফাইভ-জি যুগে প্রবেশসহ ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক গড়ে তুলছি। এই মহাসড়ক দিয়েই আমরা পঞ্চম শিল্প বিপ্লব করব।
মন্ত্রী আজ মঙ্গলবার ঢাকায় এক হোটেলে টেলিযোগাযোগ বিট সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি ও মোবাইল অপারেটর রবি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ফাইভ-জি প্রযুক্তি : সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিটিসি্এল এমডি ড. রফিকুল মতিন এবং টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন প্রমূখ।
এ ছাড়া বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ, রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বিটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন, গ্রামীণফোনের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের রেগুলেটরি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর মুখলেসুর রহমান, টেলিটকের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (৫জি) রেজাউল করিম রিজভী, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ইমদাদুল হক ও অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদসহ টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্টরা আলোচনায় অংশ নেন।
বিশ্বের ৭০টি দেশ ইতোমধ্যেই ৫জি চালুর কাজ শুরু করেছে। আমাদেরও পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি সেবা শুরু করতে হবে। তবে ৫জির শুরুতে আমাদের ইকোসিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে, টাওয়ারগুলোতেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে ফোরজি সেবার ক্ষেত্রে অনেকে ব্যবসায়িক হীনমন্যতার কারণে টাওয়ার শেয়ারিংসহ নানাভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেটি পরিহার করে উদার হতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইন্সন্টিটিউট অব বিজনেস স্টাডিজ) ড. খালেদ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে টেলিটক, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, হুয়াওয়ে, ফাইভার এট হোম, আইএসপিএবি. মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ ফাইভজি প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ ফাইভ-জি প্রযুক্তি বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন।
মন্ত্রী ফাইভ-জি নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা ২০১৮ সালে ফাইভ-জি প্রযুক্তির পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশ ফাইভ জি যুগে প্রবেশ করেছে। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফাইভ-জি ব্যবহারকারী তৈরি করা। মন্ত্রী ফাইভ-জি হোমনেটওয়ার্ক তৈরি, শিল্প বাণিজ্যে ফাইভ জি প্রয়োগ এবং কৃষি ও মাছ চাষে এর প্রয়োগে সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আইএসপির জন্য একটিভ শেয়ারিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন.আমরা মোবাইল অপারেটরদের জন্য টাওয়ার শেয়ারিং চালু করেছি। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আমরা যা করছি তার গতি বাড়াতে হবে। সবাই বলছে ২০৩০ সালে ৬জিতে যাব। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব আমরা অতিক্রম করেছি এখন আমাদের ৫ম শিল্প বিল্পবের প্রস্তুতি নিতে হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত গ্রাহক সেবার মান উন্নত করতে মোবাইল অপারেটরসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গ্রাহক গুণগত সেবার মান পাওয়ার অধিকার রাখে। গ্রাহক সেবা যদি উন্নত করতে না পারেন তাহলে গ্রাহক পাওয়া ও ধরে রাখা কঠিন হবে। ৪জি প্রযুক্তি গ্রাহক কত শতাংশ ব্যবহার করছে তা দেখতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য ৪জি সেবা প্রকৃত সেবা। ১ জানুয়ারি থেকে ৩জি সেট আমদানি ও দেশে তৈরি করা যাবে না।
তিনি বলেন, ৫জির জন্য পরিবেশটা তৈরি করেছি, গত মার্চে যে তরঙ্গ নিলাম করেছি তার শুধু দাম কমাইনি তা ৪জি ও ৫জিতে ব্যবহার করতে পারবে। ৫জি নিয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। ৫জি প্রয়োগ করার বিষয়টিতে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। সামনের বছর ৫জি তরঙ্গ নিলাম করতে পারি. এ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সবাই ৫জির জন্য মানষিক প্রস্তুতি নিয়েছে এখন ইউস কেইস নিয়ে সার্ভে দরকার। কোথায় কবে ৫জি শুরু করা যায় তার জন্য প্লান করতে হবে। বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে ৫জিতে কানেক্ট করছি। আমরা চেষ্টা করছি ৫জি যখন আসবে তার সংযোগে যেন কাজ করতে পারি। সরকারের সকল কানেকটিভিট করে ফেলেছি, সরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য অফিসগুলোকেও কানেক্ট করা হয়েছে। সব অপারেটরদের সাথে আমরা একসাথে কাজ করছি এবং অবকাঠামো শেয়ারিং করা হলে আমরা এগিয়ে যাব।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, ‘আমাদের নীতিমালা আছে। প্রয়োজনে সবার কল্যাণে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। স্পেকট্রাম শেয়ার করার প্রয়োজন হলেও তার উদ্যোগ নেয়া হবে।’
সাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা ৫জি নিয়ে প্রস্তুত আছি। এর আগে ৪জি সেবার ক্ষেত্রে অনেকে ব্যবসায়িক হীনমন্যতার কারণে টাওয়ার শেয়ারিংসহ নানাভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেটি পরিহার করে উদার হতে হবে।’
ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন, ‘আমরা সব অপারেটরদের সঙ্গে কাজ করছি। অবকাঠামো শেয়ারিং করা হলে আমরা এগিয়ে যাব।’
হোসেন সাদাত বলেন, বিশ্বের ৭০টি দেশে ৫জির কাজ শুরু হয়েছে। আমাদেরও পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করতে হবে। টাওয়ারগুলোতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলালিংকের মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘অনেক কিছুই আমাদের ৫জি নিয়ে শিখতে হচ্ছে। সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতা নিয়ে ৫জি শুরু করতে হবে।’