ক্ষতিপূরণ দিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অপারেটরেরা কল ড্রপ এর ক্ষতিপূরণ দিতে গরিমসি করছে বলে অভিযোগ করেছে মুঠোফোন গ্রাহকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন (বামুগ্রাএ)।
সংগঠনটির দাবি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিনই শত শত কোটি টাকা গ্রাহকদের ক্ষতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে টেলিযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের কল ড্রপের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
এ নিয়ে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গ্রাহকরা ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এর জন্য দায়ী কল ড্রপ এবং টেলিকম অপারেটরদের ড্রপ হওয়া কলের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দিতে না চাওয়ার মানসিকতা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে কোনো কারণে ফোন কল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াকেই কল ড্রপ বলা হয়ে থাকে। এর মূল কারণ দুর্বল সিগন্যাল।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলিকম সেবার মান ও কল ড্রপ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি তৈরি করেছে। সম্প্রতি এই কমিটি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখান থেকে জানা গেছে এ বছরের জুনের আগের ১২ মাসে গ্রাহকরা কল ড্রপের কারণে ৫২ কোটি ৫৯ লাখ মিনিট টক টাইম হারিয়েছেন।
তবে এ ক্ষেত্রে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির ২০১৬ সালের নির্দেশনা অমান্য করেছে, যেখানে প্রতি মিনিট কল ড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে গ্রাহককে ফ্রি টক টাইম দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপারেটররা প্রতি ৩ থেকে ৭ মিনিটের বিপরীতে ১ মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
২০২১ অর্থবছরে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিপূরণ হিসেবে সর্বমোট ১১ কোটি ৪৫ লাখ মিনিট দিয়েছে, যেটি গ্রাহকদের খরচ করা টক টাইমের মাত্র ২২ শতাংশ। অর্থাৎ, ৪০ কোটি ৯৩ লাখ মিনিট কল ড্রপের বিপরীতে গ্রাহকদের প্রায় ১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মিনিটে ৪৫ পয়সা সর্বনিম্ন কলরেটকে বিবেচনা করা হয়েছে।
গ্রাহকরা অন-নেট কলে ৩৭ কোটি ৬ লাখ মিনিট ও অফ-নেট কলে ১৪ কোটি ৯৯ লাখ মিনিট কল ড্রপের সম্মুখীন হয়েছেন।
অপারেটরের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মধ্যে কল করলে (অর্থাৎ গ্রামীণ থেকে গ্রামীণ, রবি থেকে রবি) সেটাকে অন-নেট এবং অন্য নেটওয়ার্কে কল করলে (গ্রামীণ থেকে টেলিটক, রবি থেকে বাংলালিংক) সে কলগুলোকে অফ-নেট বলা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপারেটররা শুধুমাত্র অন-নেট কল ড্রপের জন্য গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। ফলে আগামী এক মাসের মধ্যে এই ক্ষতিপূরণ না দিলে আন্দোলনের পাশাপাশি আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার আভাস দিয়েছে বামুগ্রাএ।