দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি’র আয়োজনে ও আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল’র সহযোগিতায় শুক্রবার (২৭ মে) থেকে কক্সবাজারের হোটেল কক্স টুডে-তে শুরু হয়েছে চারদিনের সম্মেলন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঢাকায় স্থাপিত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর প্রথম নেটওয়ার্কিং ল্যাবটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বিপিসি কোঅর্ডিনেটর মো. আবদুর রহিম, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার নাজমুল ইসলাম এবং বিজয় ডিজিটাল সিইও জেসমিন জুঁই।
দেশে এখন ৩৩৪০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হচ্ছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ চেক করার মতো সক্ষমতা (ডিপিআই) আমাদের ছিল না। আগামী ১৫ জুনের পরে নতুন মেশিন (ডিপিআই) বসবে। ফলে সেই সময়ের পরে দেশ থেকে আর কোনও জুয়ার সাইট, পর্নোগ্রাফির সাইট আর দেখা যাবে না। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা ২২ হাজার পর্নোগ্রাফির সাইট বন্ধ করেছি, ৬ হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। ডিপিআই মেশিনের সক্ষমতা না থাকার কারণে কিছু কিছু দেখা যাচ্ছিলো। সেটা আর থাকবে না।
সভাপতির বক্তব্যে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ব্যবসার পরিসর কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, একসময় ৪টি লেয়ারেই আমরা ব্যবসা করতাম। কিন্তু এই লেয়ারের সুবিধা নিয়ে আমাদের ব্যবসা এখন অন্যরা নিয়ে নিচ্ছে।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে আইএসপি সেবাদাতাদের মধ্যে লাস্ট মাইল নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভ শেয়ারিং অনুমতি চেয়ে ডাক ও টেলিযোযোগ মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন সংগঠনের মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া।
এর জবাবে অ্যাক্টিভ শেয়ারিংয়ের (লাস্ট মাইল অ্যাক্টিভ শেয়ারিং) বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী। একইসঙ্গে ইন্টারনেট সেবাদানে ঝুলন্ত তার (ওভারহেড ক্যাবল) ব্যবহার না করতে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান মোস্তাফা জব্বার।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই দেশে টুজি থেকে ৫জি নেটওয়ার্ক এসেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী আরো বলেন, আমি মনে করি অর্থনৈতিক বৈষম্যের চেয়ে কানেক্টিভিবি বৈষম্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরইমধ্যে অর্থনীতির পুরো স্ট্র্যকচারটা ডিজিটাল কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে যাওয়ায় এই বৈষম্যটা কমেছে। এখন ঘরে ঘরে নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিতে হবে। আর এক ক্যাবলে এই কাজটা করবে আইএসপিরা। লাইসেন্স শেয়ার করে নয়, ক্যাবেল শেয়ার করে এটা করবে। মোবাইল অপারেটররা শুধু টাওয়ার শেয়ার করতে পারবে। ক্যাবল নয়।
আইএসপিবি নেতোদের উদ্দেশ্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, একটি শিল্প খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন এর ট্রেডবডি। দাবি দাওয়া আদায়ে তাদেরকেই সোচ্চার থাকতে হবে। ঘরের সমস্যা ঘরে মিটিয়ে ফেলে নিজেদের শক্তি বাড়াতে হবে। আর আমি কোনো থানা-জেলা আইএসপি চিনি না। আমি চিনি আইএসপিএবি। যে কোনো সমস্যার সমাধানে এই একটি সংগঠনের মাধ্যমেই আমার কাছে আসতে হবে। আর অবৈধ আইএসপি কিংবা কেউ যদি সেবা দিতে বাধা সৃষ্টি করে, পেশী শক্তি দেখায় তাহলে সরাসরি আমার দপ্তরকে জানাবেন। ইন্টারনেট সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো মাস্তানি চলবে না। সবকিছু চলবে নিয়ম মাফিক।
এসময় দেশের নেটওয়ার্ক প্রকৌশলীদের বিশ্বমানের উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন হতে সিসকো, জুনিপার ও মাইকোটিক সহ সবধরনে ভেন্ডর ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে আইএসপিএবি পূর্ণাঙ্গ আরেকটি ল্যাব স্থাপন করবে বলে জানান সংগঠনটির সভাপতি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আইএসপিএবি জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, সহ-সভাপতি মো: আনোয়ারুল আজিম, যুগ্ম-মহাসচিব মো: আব্দুল কাইউম রাশেদ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো: আসাদুজ্জামান, পরিচালক সাকিফ আহমেদ, মাহবুব আলম, মো: জাকির হোসাইন, এ এম কামাল উদ্দীন আহমদ সেলিম, ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন এবং মো: নাছির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে দেশের প্রায় ৪০০ ইন্টারনেট প্রকৌশলী, নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা অংশ নিচ্ছেন। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশীয় এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল এই কর্মশালা পরিচালনা করবেন। শেষ দিন কর্মশালার সপমনীতে উপস্থিত থাকবেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার।