ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রযুক্তির চাকা সচল রাখতে প্রযুক্তি শিক্ষায় সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিতে টেলিকম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার না করে পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতার পর জাতির পিতার প্রথম কাজটি ছিল টিএন্ডটি বোর্ড গঠন, আইটিইউয়ের সদস্যপদ অর্জন, বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং প্রযুক্তি শিক্ষা সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ।
তিনি বলেন, প্রযুক্তি বিকাশে বঙ্গবন্ধু স্থাপিত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশকে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকায় বুয়েটে টেলিকমিউনিকেশন্স ও ফটোনিক্স বিষয়ক তিন দিনব্যাপী চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন তিনি।
বুয়েটের ইইই বিভাগের সহযোগিতায় আইইই কমিউনিকেশন্স বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আইইই আইসিটিপি জেনারেল চেয়ার, ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রামজি প্রাসাদ, বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার, বুয়েটের ইইই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কামরুল হাসান, আইইই বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম মশিউল হক এবং বুয়েটের আইআইসিটি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বক্তৃতা দেন।
টেলিকমিউনিকেশন্স ও ফটোনিকস বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই সম্মেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ব্যবহার না করে আমরা সামনে এগোতে পারব না। বিজ্ঞান প্রযুক্তি কত সহায়ক করোনা তার প্রমাণ।
বিশ্ব করোনা মহামারি সংক্রমণের এক বছরের মধ্যে টিকা আবিষ্কার তার বড় দৃষ্টান্ত বলে তিনি বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।। আমাদের তরুণ সমাজ অত্যন্ত মেধাবী ও সৃজনশীল উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে ৩৫ বছর কাজ করে যাওয়া এই প্রযুক্তিবিদ।
তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সালে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর আমাদের ছেলেরাই মহাকাশ বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও নিরবচ্ছিন্নভাবে তা পরিচালনা করছে। তিনি আইওটি, এআই, রোবটিকস, ব্লকচেইনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে অধিকতর গবেষণা এবং এই সব প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রযুক্তিতে অতীতে শতশত বছরের পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ প্রযুক্তি ডিভাইস উৎপাদন এবং রপ্তানিকারক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তি আমদানিকারক দেশ থেকে উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশ নেপাল ও নাইজেরিয়ায় কম্পিউটার ও ল্যাপটপ রপ্তানি করছে। আমরা আমেরিকায় মোবাইল রপ্তানি করছি। সৌদি আরবে আইওটি পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। দেশের শতকরা ৬৩ ভাগ মোবাইল ফোনের চাহিদা আমাদের মোবাইল কারখানা থেকে মেটানো হচ্ছে। আমরা সৌদি আরব ও ভারতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউদথ রপ্তানি করছি। খুব শিগগিরই মালয়েশিয়া ও ভুটানে ব্যান্ডউদথ রপ্তানি করা হবে বলে জানান বিসিএস ও বেস্সিসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ট্রেডবডিসমূহের সাবেক এই কর্ণধার।
দেশে ২০২২ সালের মধ্যে এমন কোনো ইউনিয়ন থাকবে না যেখানে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পাওয়া যাবে না বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ।
তিনি বলেন, ১৬০টি দুর্গম ইউনিয়ন ছাড়া ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইভার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তিনি কৃষি ও মৎস্য চাষে আইওটি ডিভাইস কাজে লাগানোর মাধ্যমে দেশে কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করতে বুয়েটসহ ডিজিটাল প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞদের ভূমিকা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ফাইভজি প্রযুক্তি চালুর ফলে দেশে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন । একই সঙ্গে দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহসহ সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহে ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বুয়েট ভিসি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে টেলিকম খাতের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে বলেন, এই খাতে আরও গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য টেলিকম খাতের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। তিনি তাদের শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টে পাঠাতে টেলিকম সেক্টর খুবই কার্যকর অবদান রাখবে বলে উল্লেখ করেন।