ফোরজি সেবার পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক সেবার মান দেখাতে পারেনি কোন অপারেটরেরই। এ নিয়ে বিটিআরসি’র কাছে নালিশও আছে বিস্তর। এসেছে আইনি নোটিশও। কিন্তু এটা অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে থানায় ‘দারোগা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মতো বিষয়। তবে গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বিটিআরসি পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাশাপাশি দেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে রাখতে আগামী মার্চে ফাইভজি’র জন্য বেতার তরঙ্গ নিলাম করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ।
বৃহস্পতিবার টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি’র সদস্যদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এসব তথ্য দিয়েছেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার।
আলাপকালে তিনি আরো জানিয়েছেন, ফেসবুক থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ‘কনটেন্ট’ সরানোর প্রযুক্তি সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তবে এ মুহুর্তে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ মাধ্যমেই আপত্তিকর কনটেন্ট সরানো হচ্ছে।
মত বিনিময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিটিআরসি’র কমিশনার প্রকৌশলী মহীউদ্দিন আহমেদ, আবু সাঈদ দিলজার হোসাইন এবং এ কে এম শহীদুজ্জামান, টিআরএনবি’র সভাপতি রাশেদ মেহেদী এবং সাধারন সম্পাদক সমীর কুমার দে।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র বিভিন্ন বিভাগের মহাপরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে জবাব দেন।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জানান, আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক পরীক্ষামূলক ফাইভজি চালু করছে। আর বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য আগামী মার্চ মাসে বেতার তরঙ্গ নিলাম হবে। ২৩০০ মেগাহার্টজ, ২৬০০ মেগাহার্টজ এবং ৩৫০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে এ নিলাম হবে।
এর মধ্যে ২৩০০ মেগাহার্টজে ব্যান্ডে ৬৫ মেগাহার্টজ, ২৬০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ১০০ মেগাহার্টজ এবং ৩৫০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৪০০ মেগাহার্টজ পরিমাণ বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত নিলামে বরাদ্দের ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরদের জন্য ভিত্তি মূল্য নির্ধারন করা হয়নি।
এক প্রশ্নে জবাবে বিটিআরসি প্রধান জানান, ফোরজি সেবায় এখন পর্যন্ত গুণগত মান পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, এ বিষয়টি বিটিআরসি’রও নজরে আছে। বিটিআরসি এরই মধ্যে ২২৭ টি উপজেলায় ১২ হাজার ৮০০ কিলোমার এলাকায় মোবাইল অপারেটরতের সেবার গুণগত মান পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষায় কোন অপারেটরেই সন্তোষজনক সেবার মান পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশী কল ড্রপ পাওয়া গেছে গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে।
তিনি জানান, কল ড্রপের বড় দু’টি কারন হচ্ছে গ্রাহকের তুলনায় অপর্যাপ্ত বেতার তরঙ্গ এবং বিটিএস টু বিটিএস ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকা। ফাইভজি’র জন্য বেতার তরঙ্গ নিলাম হলে অপারেটরদের বেতার তরঙ্গ সক্ষমতা বাড়বে। এর ফলে তখন ফোরজি’র সেবার মানও আরও উন্নত হবে।
এ ছাড়া এনটিটিএন অপারেটরদের সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের দহৃরত্ব কমিয়ে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবায় ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগের পমিাণ বাড়াতেও প্রচেষ্টা চলছে। এ ছাড়া গুণমত মান নিশ্চিত করার জন্য বিটিআরসি নিয়মিত ড্রাইভ টেস্ট বা গুণমত মান পরীক্ষা করছে। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, অপারেটরদের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে টিএমএস বা টেলি মনিটরিং সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এখন থেকে মোবাইল অপারেটররা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কি পরিমাণ ভয়েস কল সেবা দিচ্ছে, কি পরিমাণ ইন্টারনেট প্যাকেজ সেবা দিচ্ছে, তা নিজস্ব প্রযুক্তিতেই বিটিআরসি জানতে পারবে। ফলে সেবার গুণমত মান বৃদ্ধি ছাড়াও অপারেটরদের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ারও কোন সুযোগ থাকবে না। গ্রাহকদের সুবিধার্থে এখন থেকে কোন অপারেটরই ৮৫টির বেশী প্যাকেজ নির্ধারন করতে পারবে না, এমন নির্দেশনাও শিগগিরিই জারী করা হবে।
অপর এক প্রশ্নে জবাবে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরাসরি ‘কনটেন্ট’ অপসারনের প্রযুক্তি বর্তমানে কোন দেশেরই নেই। প্রতিটি দেশকেই ফেসবুক কিংবা গুগলের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেবাদাতা প্রািতষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট সরাতে হয়। তবে সরাসরি কনটেন্ট সরানোর দু’একটি প্রযুক্তি এরই মধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে, এমন তথ্যও বিটিআরসি’র কাছে এসেছে। বিটিআরসি সেগুলোর সন্ধান করছে। যত দ্রুত সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বিটিআরসি তা সংগ্রহ করবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলা হয়েছে।