সেবার নামে দেশের শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন গ্রাহকের অর্থ লুটপাট ও প্রতারণা করছে করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। অপারেটরটির বিরুদ্ধে ১৩ দফা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রাহক অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একটি চিঠিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কাছে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। চিঠিটি সচিবালয়ে জমা দেওয়ার পাশাপশি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ইমেইলেও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ প্রায় ৭.৫ কোটি গ্রাহক নিয়ে গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ মুনাফাকারী ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হলেও গ্রাহক সেবা ও জবাবদিহিতায় গ্রামীণফোনের অবস্থান বর্তমানে সর্বনিম্নে। এ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছে কোন জবাবদিহিতা করে না। এরা সেবার নামে গ্রাহকের অর্থ লুটপাট ও প্রতারণায় লিপ্ত হয়েছে। এসকল প্রতিষ্ঠানের কারণেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আপনার দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনামকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
অভিযোগ লিপিতে গ্রামীণফোন বিটিআরসির এনওসি নিষেধাজ্ঞা ও আইন বহুবার লঙ্ঘন করেছে দাবি করে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের অভিযোগ –
(১) এনওসি বন্ধ করার পরেও তারা নতুন নতুন প্যাকেজ অফার দিয়েছে। এমনকি জাতীয় শ্লোগান জয়বাংলাকে নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহার করেছে।
(২) একজন গ্রাহকের সিম অব্যবহৃত থাকার ১৫ মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকার পরও আরো ৩০ দিন অব্যবহৃত যদি থাকে তারপরেই আইন অনুযায়ী ঐ সিম বা নাম্বার বিক্রয় করতে পারে অপারেটর। কিন্তু গ্রামীণ ফোন পূর্বেও সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সিমও নিয়ম ভঙ্গ করে বিক্রি করার নজির রয়েছে। সম্প্রতি আবুল বাশার নামে একজন গ্রাহক জিপির বিরুদ্ধে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছে তার চলতি সিম অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার কারণে।
(৩) সারাদেশে ১৪টি গ্রামীণ সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলোও বন্ধ করে দিচ্ছে। গ্রাহকরা তাদের সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। তাদের কল সেন্টার ১২১ এ ফোন করে উল্টো গ্রাহকের টাকাও কাটছে আবার হয়রানিও বাড়ছে।
(৪) কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও এখন তারা আর তা দিচ্ছে না। এমনকি মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল কলড্রপ করা যাবে না। আর কলড্রপ হলে ক্ষতিপূরণ সঙ্গেসঙ্গেই দিতে হবে। কিন্তু তারা কোনটাই করছে না। আপনি জানেন, গত বছর ৬-৮ নভেম্বর রাজধানীর ১৪টি এলাকায় বিটিআরসির কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউএএস) পরীক্ষায় যান্ত্রিকভাবে ৯০ সেকেন্ডে ৩ হাজার ৩০০টি কল করা হয়। পরীক্ষায় জিপির কলড্রপ হয় ৩.৩৮ শতাংশ (আইটিইউ’র নিয়ম অনুযায়ী ২ শতাংশের বেশি কলড্রপ করা যাবে না।
(৫) সংযোগ পেতে জিপি গড় সময় নেয় ১০.১৪ সেকেন্ড (বিটিআরসি’র পরীক্ষা অনুযায়ী।) অথচ বিটিআরসি’র আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় ৭ সেকেন্ড। এছাড়াও অনেকক্ষেত্রে সময় লাগে ৩০ সেকেন্ডের মত। এতে গ্রাহক বিড়ম্বনা চরম মাত্রায় পৌঁছেছে।
(৬) আমাদের পর্যবেক্ষণে জিপির ইন্টারনেট গতি সর্বোচ্চ ২ এমবিপিএস। কোথাও ১০০ কিলোবাইট বা কোথাও ১ মেগাবাইট। অথচ ৪জি চালুর সময় শর্ত ছিল সর্বনি¤œ গতি হবে ৭ এমবিপিএস।
(৭) ইন্টারনেট প্যাকেজের সাথে মূল ব্যালেন্স থেকেও টাকা কেটে নিচ্ছে জিপি। এর ফলে গ্রাহক তার নির্দিষ্ট টক টাইম থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে পারছে না।
(৮) ব্যালেন্স লোন দিলে দুই দফা ভ্যাট কাটার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সিলিং রেট ২ টাকা কলরেট কাটছে অপারেটরটি।
(৯) ছোট ছোট ইন্টারনেট ডেটা প্যাকেজ ব্যবহার করতে না করতেই ব্যালেন্স শেষ দেখাচ্ছে। এমনকি তার ইন্টারনেটের ধীর গতির খেসারত দিচ্ছে গ্রাহকরা।
(১০) জিপির ৯৫ শতাংশ গ্রাহক তাদের ৮ ধরণের প্রিপেইড ব্যবহারকারী। এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন অফারের কথা বলে ১.৬৪ টাকা প্রতি মিনিট চার্জ নিচ্ছে। আবার এর মধ্যে ৩-৪টি কলড্রপও করছে।
(১১) মিউট কলের মাত্রা দিন দিন তাদের বেড়েই চলেছে। এতে গ্রাহক বিড়ম্বনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(১২) এসএমপি নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ করছে অন্য অপারেটররা।
(১৩) এমএনপি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এই অপারেটরটি বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ ছাড়াও চিঠিতে বলা হয়েছে, গত বছর বিটিআরসি’তে ৫ হাজার ৪৩৪টি অভিযোগ জমা পড়েছিল সব অপারেটরের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে কেবল মাত্র গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছিল প্রায় ২ হাজার। ভোক্তা অধিদপ্তরে এখনো জমা পড়ে রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার অভিযোগ। কিন্তু ২৭/০৫/২০১৭ইং থেকে রবি’র একটি রিটের প্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর গ্রাহকদের অভিযোগ আর নিষ্পত্তি করতে পারছে না। যদিও এখনো প্রতিদিনই অনেক গ্রাহক অলাইনে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ পাঠাচ্ছে। এমনকি আপনি নিজেও স্বাক্ষী হিসেবে জানেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব এ. কে. এম. রহমতুল্লাহ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সহ অনেক সংসদ সদস্যগণ মহান জাতীয় সংসদেও গ্রামীণফোন সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য রেখেছেন। জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে অসংখ্য সংবাদ প্রচার হয়েছে জিপির গ্রাহক হয়রানি সম্পর্কে। কিন্তু কি কারণে ও কিসের ক্ষমতাবলে এই প্রতিষ্ঠানটি দিনের পর দিন গ্রাহকদের দুর্ভোগে ফেললেও কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না তা আজ জাতির কাছে প্রশ্ন।