সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলে থাকা অবৈধ ইন্টারনেট ও ডিস ক্যাবল অপসারণ অভিযানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অর্ধ লক্ষাধিক উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ব্যক্তিগত ও অফিস-ব্যবসায় কাজ ছাড়াও অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের। বেশি মূল্যের ডেটাপ্যাক কিনে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন সংযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকার অভিভাবকরা।
ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালতের তিন দিনের অভিযানে অন্তত পাঁচশ’ কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। অভিযানে অনন্ত ছয় কোটি টাকার ক্যাবল কাটা হয়। এতে ৫০ হাজারের অধিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। রোববার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে হাজারিবাগ, মতিঝিল ফুলবাড়িয়া, মগবজারের ঝুলন্ত তার। সব মিলিয়ে ১৫ শ কিলোমিটার ক্যাবল কাটা পড়েছে।
গ্রাহকদের এই দুর্ভোগের অবসান কল্পে রোববার নগর ভবনে সিটি করপোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) নেতারা।
বৈঠকে ম্যানহোল ও ড্রেন দিয়ে ক্লাম্প করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তার সঞ্চালনের পথ বাতলে দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র। আগামীকাল সোমবার থেকে সাত মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে এই পদ্ধতিটির সম্ভাব্যতা যাচাই করবে আইএসপিএবি।
আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম, মহাসচিব ইমদাদুল হক, আইএসপিএবি সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ আমিন বিদ্যুত এবং যুগ্ম মহাসচিব মঈন উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের আলোচনা বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব ইমদাদুল হক বলেন, ‘মাটির ওপরে ক্যাবল রাখতে চাই না আমরাও। কিন্তু যারা কাজটি করছেন, তারা সঠিকভাবে করেনি। দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে আন্ডারগ্রাইন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সংযোগ নিয়ে প্রতিটি বাড়িতে দেওয়া হলে আবারও তা মাটির ওপরে চলে যাচ্ছে। আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনে বাসা-বাড়ির সামনে ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রাখলে আর কোনও বৈদ্যুতির পোলে নির্ভর করতে হবে না। কিন্তু যারা দায়িত্বটি নিয়েছেন, তারা তা করতে পারছেন না। তাছাড়া এনটিটিএনদের উচ্চমূল্যের কারণেও আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার অনেকটাই দুঃসাধ্য। বিষয়টি আমরা মেয়র মহোদয়ের কাছে পেশ করেছি।’
বৈঠক সূত্রে জানাগেছে, আলোচনায় ক্যাবল অপসারণে অনড় রয়েছেন মেয়র। পরিচ্ছন্ন নগর গড়তেই এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম কিছুটা শিথিল করার আশ্বাস দিয়ে বিকল্প পথে সংযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিটিআরসি ছাড়াও সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এখন থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে সংযোগ লাইন স্থাপন করতে হবে। এজন্য ম্যানহোল ও রাস্তার পাশের ড্রেনে ক্লাম্প ব্যবহার করে সুশৃঙ্খল ভাবে ফাইবার সংযোগ সঞ্চালন করতে হবে।
এদিকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে ৫৬ শতাংশ মানুষের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে আছে ৭-৮ শতাংশ। ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে যখন গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াতে বলা হচ্ছে তখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নতা বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক ডিজিবাংলাকে বলেন, আমরা সেবা অব্যাহত রাখার জন্য মেয়রেরকে একটি প্রস্তাব দিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু আইএসপিরা ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে সেটা অব্যাহত রাখতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি আন্ডার গ্রাউন্ড লাইন করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। টাকা যা খরচ হবে আইএসপিরা তা ধীরে ধীরে দিবে। আমার প্রস্তাব হলো টাউনও পরিস্কার হোক। আইএসপিরাও যেন বঞ্চিত না হয়। মেয়র মহোদয় খুবই ডায়ানামিক ও ভালো মানুষ। আমি তার ওপর আস্থা রাখছি।