গ্রামীণ ফোনের কাছে সরকারের পাওনা ১২ হাজার কোটি টাকা। পাওনা আদায়ের বিষয়টি নিয়ে মামলা-পাল্টা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা জমা দেয়ার তাগাদা দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশনা অনুসরণ ছাড়াই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ-কে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে গ্রাহক সংখ্যায় শীর্ষে থাকা এই অপারেটি। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এটাকে ঔদ্ধত্য বলেও মনে করছেন টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, গত নভেম্বরে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠানোর পর আমরা কড়া জবাব দিয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেলকে অবহিত করলে তিনিও আদালতে বিষয়টি পেশ করেছেন। আদালত গ্রামীণ ফোনকে ধমক দিয়ে বলে দিয়ে সাফ জানিয়েছে দিয়েছে বাংলাদেশের আইন মেনেই এখানে ব্যবসায় করতে হবে।
বিষয়টি সিঙ্গপুর সরকার পর্যায়েও গড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি থাকলেও কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এই চুক্তির অধীনে না থাকায় তারাও এই দায় নেবে না। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ারও কোনো সুযোগ থাকছে না।
এ বিষয়ে বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনকালে যে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য আদালত রাষ্ট্রপতিকে বিমুক্তি দিয়েছে। তাই এই উকিল নোটিশটি বাংলাদেশের জন্য অপমান। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের মর্যাদা জড়িত। কাজেই রাষ্ট্রকে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। খুব শক্তভাবে এটি মোকাবেলা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা সব ব্যবস্থা আগেই নিয়েছি। বিচারাধীন থাকায় বসে আছি। আদালত মামলা খারিজ করলেই আমরা আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রশাসক নিয়োগ করে বকেয়া আদায় করবো।
একইভাবে এই উকিল নোটিশ লাইসেন্স আইনের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান মো: জহুরুল হক। তিনি বলেন, এটা খুবই অনিভেপ্রেতো। এটা হওয়া উচিত না। এটা ন্যায় সঙ্গত নয়। কারণ, দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব হলে সেই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা করতে পারে।
যে আরবিট্রেশন চেয়ে গ্রামীণফোন ইতিমধ্যেই হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে হেরে গেছে সেটি বিটিআরসি কীভাবে দেবে বলে প্রশ্ন রাখেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে নিরীক্ষায় ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ না করায় প্রথমে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। হাই-কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট করতেই তারা সাত বছর ব্যয় করে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ফ্রেশ অডিট করার নির্দেশ দেয়। সেই অডিটের মাধ্যমে এখন গ্রামীণফোনের কাছে পাওয় ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই অডিট সরকার বা বিটিআরসি কেউ করেনি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে এটি হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এই আদালতের রায় মানতে বাধ্য। কিন্তু অডিটের টাকা না দিতে তারা জজ কোর্টে যায়। সেখানে হেরে তারা হাই কোর্টে গিয়ে ২ মাসের জন্য একটি স্টে অর্ডার পায়। এরপর আপিল বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের তিন মাসের পর কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখন তারা আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে চাইছে। এ নিয়ে তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে একটি নোটিশ দিয়েছে। এটা কতটা আইন সঙ্গত তা বিবেচনা করতে হবে। কেননা বিটিআরসি’র সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, গ্রামীণফোন এখন বিটিআরসি’র সঙ্গে আরবিট্রেশন চায়। আইনে বিটিআরসি’র আরবিট্রেশন করার কোনো ক্ষমতা বা আইন নেই। যদি আইন সংশোধন করা হয়, তাহলে সম্ভব। নচেৎ সম্ভব না। এছাড়া হাইকোর্টও বলে দিয়েছে আরবিট্রেশনের কোনো সুযোগ নেই। এটা করতে হলে হয় সুপ্রিম কোর্টের রাং অথবা সংসদে বিল পাশ করিয়ে আইন সংশোধন করতে হবে।
জহুরুল হক বলেন, গ্রামীণ ফোনকে দেয়া লাইসেন্স এর শর্তের কোথায় ইন্টারন্যাশনাল ট্রিটির কথা নেই। তারা অন্য একটি আইনে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে চাইছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে বিদ্যমান ১৯৬৯ সালের চুক্তির অধীনে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যবসায়িক কারণে যদি কোনো সমস্যা হয় তারা সেখানে আরবিট্রেশন চাইতে পারে। কিন্তু বিটিআরসি’র চুক্তি, লাইসেন্স কোথাও এই আরবিট্রেশনের সুযোগ নেই। এ কারণেই আদালতের রায় মানতে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিটিআরসি।