দেশের সার্বভৌমত্ব ও সুরক্ষা অক্ষুন্ন রেখে বাংলাদেশে কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে খসড়া নীর্দেশিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। খসড়া নীতিমালা নিয়ে আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দিতে পারবেন নাগরিকরা। মতামত দিতে হবে ই-মেইলে। ছক আকারে ক্রমিক অনুযায়ী, খসড়া গাইডলানের তথ্য ও সংশোধন/সংযোজন/পরিমার্জনের বিস্তারিত লিখে মেইল করা যাবে এই ঠিকানায় ক্লিক করে।
ইংরেজি ভাষায় বিটিআরসি’র ওয়েব পেজের নোটিশ বোর্ডে প্রকাশিত এই নীতিমালার শুরুতেই রয়েছে রেগুলেটরি ও লাইসেন্সিং গাইডলাইন। ৬৫ পৃষ্ঠার এই খাসড়ায় এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও পরিষেবা নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ১০০ শতাংশ বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই), বিদেশি অংশীদারিত্ব, যৌথ উদ্যোগ বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
লাইসেন্সধারী এনজিএসও প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইটের মাধ্যমে একই সঙ্গে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা, ইন্ট্রানেট পরিষেবা (দেশীয় ডেটা যোগাযোগ), ইন্টারনেট অব থিংস ও মেশিন-টু-মেশিন যোগাযোগ, গতি পরিষেবায় আর্থ স্টেশন, আর্থ এক্সপ্লোরেশন স্যাটেলাইট পরিষেবা, রিমোট সেন্সিং বা আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিষেবা ও বিটিআরসি অনুমোদিত অন্যান্য পরিষেবা দিতে পারবে। তবে সরাসরি বাসায়, সম্প্রচারে, স্যাটেলাইট আইএমটিভিত্তিক পরিষেবা বা টেলিযোগাযোগ পরিষেবা দিতে পারবে না। এনজিএসও গেটওয়ে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্রাফিক পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
এজন্য অবশ্যই সেবা দেওয়া শুরুর আগে বাংলাদেশের মধ্যে অন্তত একটি গেটওয়ে সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। তবে বিটিআরসি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই অতিরিক্ত গেটওয়ে স্থাপনে উৎসাহিত করেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে স্থাপন করা যেকোনো ব্যবহারকারীর টার্মিনাল অবশ্যই স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে প্রমাণীকৃত ও পরিবেশিত হতে হবে।
‘বাংলাদেশে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারীদের জন্য প্রণীত খসড়া রেগুলেটরি ও লাইসেন্সিং গাইডলাইনস’ শিরোনামের এই নির্দেশিকায় এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও পরিষেবা নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ১০০ শতাংশ বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই), বিদেশি অংশীদারিত্ব, যৌথ উদ্যোগ বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশিকা অনুসারে, লাইসেন্সের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। নিবন্ধন নিতে আবেদন বা প্রসেসিং ফি ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে অধিগ্রহণ ফি হবে ১০ হাজার ডলার ও বার্ষিক ফি হবে ৫০ হাজার ডলার। এ ছাড়া, টার্মিনাল প্রতি বার্ষিক স্টেশন বা টার্মিনাল ফি দিতে হবে ২০ ডলার করে। সেবাদাতা লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক নিরীক্ষিত মোট রাজস্বের সাড়ে পাঁচ শতাংশ দিতে হবে বিটিআরসিকে। মোট রাজস্বের আরও এক শতাংশ ‘মহাকাশশিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’র অংশ হিসেবে দিতে হবে। লাইসেন্স অনুমোদন প্রাপ্তির ৩০ দিনে মধ্যে লাইসেন্স আবেদনের জন্য অফেরতযোগ্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা জামানত দিতে হবে।
এরপর ৮টি স্লটের তরঙ্গ বরাদ্দ পাবে লাইসেন্স ধানী এনজিএসও প্রতিষ্ঠান। তরঙ্গগুলো হলো ১০.০৭-১২.৭ গিগাহার্জ, ১৪-১৪.৫ গিগাহার্জ, ১৭.৮-১৮.৬ গিগাহার্জ; ১৮.৮- ১৯.৩ গিগাহার্জ, ২৭.৫-২৯.১ গিগাহার্জ, ২৯.৪৫২৫-৩০ গিগাহার্জ; ৩৭.৫-৪২ গিগাহার্জ এবং ৪৭.২-৫০.২ গিগাহার্জ।
প্রসঙ্গত, বছর তিনেক ধরে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক। সেসময় তারা দুবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। বিডা বিষয়টি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) জানালে শুরুর দিকে স্টারলিংকের প্রতি বিটিআরসির অনাগ্রহ ছিল। তবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি ও আইসিটি বিভাগের আগ্রহে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড স্টারলিংকের প্রযুক্তি পরীক্ষার জন্য বিটিআরসির অনুমোদন নেয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ওই বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসে স্টারলিংকের কিছু প্রযুক্তি।
পরীক্ষায় স্টারলিংক ইন্টারনেটের ডাউনলোড স্পিড ১৫০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ডের মধ্যে পাওয়া যায়। এসময় নিজেদের ওয়েবসাইটে নতুন কাভারেজে বাংলাদেশের নাম যুক্ত করে স্টারলিংক। এর পর নজরদারি ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে আটকে ছিল। এরই মধ্যে চলতি বছরের উত্তাল সময়ে সে বিষয়টিও চাপাও পরে যায়। তবে নভেম্বরে ফের আলোচনা শুরু করে বিডা।