শুক্রবার ভোর রাত থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবার গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। মোবাইল ফোনে কম ব্যান্ডইথ ব্যবহার হওয়ায় বোঝা না গেলেও ব্রডব্যান্ড সেবায় সুস্পষ্ট হয়েছে। সূত্রমতে, কুয়াকাটায় স্থাপিত দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি (সি-মি-উই-৫) সিঙ্গাপুর প্রান্তে শুক্রবার দিবাগত রাত বারোটার দিকে বিচ্ছিন্ন হয়। ফলে ওই সময় থেকে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল থেকে কোন ব্যান্ডউইথ সরবরাহ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশকে সাগরের তলদেশ দিয়ে সংযুক্ত সকল ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের মাধ্যমে সঞ্চালিত ১৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশজুড়ে ইন্টারনেটের ধীরগতি এবং ব্যাপক ভাবে পিং লস হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট সেবা এখন চলছে সি-মি-উই-৪ এবং ইন্টারন্যাশনাল টেরিসট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) সংযোগ দিয়ে। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বেনাপোল ও হরিদাশপুর সীমান্ত দিয়ে স্থলপথ সংযোগে।
দেশেজুড়ে ইন্টারনেটের এই ধীরগতি আরো সপ্তাহখানেক ধরে চলবে ধারণা দিয়েছেন দেশের সাবমেরিন ক্যাবল ব্যান্ডউইডথ-এর মূল সেবা প্রদানকারী এবং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মির্জা কামাল আহম্মদ।
সমস্যার সমাধান কখন হবে তার কোন সময়সীমা না বলে ডিজিবাংলাটেক-কে তিনি জানিয়েছেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি সিঙ্গাপুর হতে ৪৪০ কিলোমিটার পশ্চিম প্রান্তে আকস্মিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ১৬০০ জিবি ব্যান্ডউইথ বন্ধ হয়ে গেছে। সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে কেবলটি মেরামত করে দ্রুত পুনঃ সংযোগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্নকৃত উল্লেখযোগ্য ব্যান্ডউইথ সি-মি-উই-৪ এ শিফটিং এর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কনসর্টিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কাল -পরশু এটা করা সম্ভব হতে পারে। সব মিলিয়ে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে বলে ধারণা দিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশনের (আইআইজি) সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জুনায়েদ জানিয়েছেন, কনসোর্টিয়ামের দেশগুলোতে শনি ও রবিবার ছুটি থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগে সময় লাগছে। তবে সোমব ও মঙ্গলবার নাগাদ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া ডিজিবাংলা’র সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, রেশনিং এর মাধ্যমে আমরা তৃণমূলে নিরবিচ্ছন্ন ইন্টারনেট সেবা ধরে রাখারা চেষ্টা করছি। এ কারণেই সেবাদাতারা ব্যান্ডউইথের জন্য বিএসসিপিএলসি’র পাশাপাশি আইটিসি ব্যবহার করে। দেশে সাবমেরিন ও আইটিসির এই ব্যান্ডউইথের অনুপাত ৬০ঃ৪০। আইটিসি দিয়েই তারা ব্যাকআপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। তাই ইন্টারনেটে কিছুটা ধীর গতি হলেও ততটা প্রকট হবে না। শুধু যারা সি-মি-উই-৫ বেশি ব্যবহার করতেন তারা সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, সি-মি-উই-৫ ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের মোট ব্যান্ডউইথের ব্যবহারে ২০ শতাংশের মতো প্রভাব পড়ছে। এরই মধ্যে সি-মি-উই-৪ দিয়ে কিছু ব্যান্ডউইথ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। এখানে ৩৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আছে। আর আইটিসি-তে আছে ৩৫০০ জিবিপিএস। দেশে মোট ব্যান্ডউইথ চাহিদা ৫২০০ জিবিপিএস। আইটিসি ও সি-মি-উই-৪ দিয়ে এখন আপদকালীন সমস্যা মেটানো হচ্ছে।
এদিকে শনিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির মহাব্যবস্থাপক (চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) সাইদুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন ক্যাবল পুনরায় মেরামত করে চালু না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি ধীর থাকতে পারে জানিয়ে গ্রাহকগদের এ জন্য সাময়িক অসুবিধায় কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি।