সরকার টেলিযোগাযোগ খাত থেকে কর ও ফি বাবদ যে হারে অর্থ নেয়, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দ্বিগুণের বেশি। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় হার ২২ শতাংশ। মুনাফা কিংবা লোকসান যাই হোক না কেন অপারেটরদের মোট আয়ের ওপর ২ শতাংশ লেনদেন কর দিতে হয় যা ক্ষতিকর তামাকের ওপর আরোপিত ৩ শতাংশের কাছাকাছি।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) ও টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমনটাই তুলে ধরেছেন অ্যামটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব) মোহাম্মদ জুলফিকার।
বৈঠকে টেলিকম খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, মোবাইল অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০০ টাকা আয় করলে তার ৫৪ টাকাই সরকার পায় বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি বাবদ।
উপস্থাপনায় তিনি দেখালেন, উপস্থাপনায় দেখানো হয়, অপারেটদের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের ৩৯ টাকা বিভিন্ন কর বাবদ নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লাইসেন্স, তরঙ্গসহ বিভিন্ন ফি বাবদ ১৫ টাকা নেয় বিটিআরসি। ১৮ টাকা পায় টাওয়ার কোম্পানিসহ বিভিন্ন বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, যারা টেলিযোগাযোগ খাতে সেবা দেয়। ২৬ টাকা রাখতে পারে অপারেটর।
সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ—১১টি দেশের করপোরেট করহারের চিত্র তুলে ধরে অ্যামটব জানিয়েছ, কেবল বাংলাদেশেই টেলিযোগাযোগ খাতে করপোরেট কর সবচেয়ে বেশি।
উপস্থাপনায় টেলিযোগাযোগ খাতে কর বছর বছর কতটা বেড়েছে, তা-ও তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গ্রাহক ১০০ টাকা মুঠোফোনে রিচার্জ করলে তা থেকে কর কাটা যেত ২১ টাকা ৭৫ পয়সা। এখন যায় ৩৩ টাকার কিছু বেশি।
উপস্থাপনায় অ্যামটবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে জিডিপিতে টেলিকম খাতের অবদান ১ শতাংশ। কিন্তু সরকারের রাজস্ব আয়ের ৫ শতাংশ আসে এখান থেকে। ১ শতাংশ জিডিপি অবদানের বিপরীতে উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, কাজাখাস্তান, মালয়েশিয়া, কিরজিখিস্তান এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশে রাজস্ব খাতে অবদান বাংলাদেশের (৫%) তুলনায় কম। মার্চেন্ট, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় মোবাইল খাতের ওপর করপোরেট বেশি। তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানিকে ৪০ শতাংশ এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর দিতে হয়, যা তামাকজাত প্রতিষ্ঠানের সমান।
টেলিকম খাত ও সেবায় করপোরেট কর, দ্বৈত কর, স্পেকট্রামের ওপর মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) মতো বিভিন্ন করের বোঝা লাঘব করা হলে, সঞ্চিত অর্থ অবদান রাখবে জাতীয় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপিতে।
গোলটেবিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,টেলিকম বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, এফআইসিসিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির, গ্রামীণ ফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, রবি’র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের অ্যাকটিং সিইও তৈমুর রহমান, টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিনসহ মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তারা।
অ্যামটব এবং টেলিকম বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে বলেন, প্রতি মুহূর্তের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা হয়েও এই খাতের করপোরেট কর তামাকজাত প্রতিষ্ঠানের সমান বা কাছাকাছি। এমন প্রেক্ষাপটে এই খাতের কর ব্যবস্থার দাবি অপারেটর প্রতিষ্ঠান এবং অ্যামটবের, যার প্রতিফলন আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেখার প্রত্যাশা তাদের।