বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কর দিতে হয় বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের। বিভিন্ন কর বাবদ ১০০ টাকার ৯৮ টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ এই কর বাদ দিয়ে যদি সিম ও কর্পোরেট কর প্রত্যাহার এবং স্মার্টফোন ও ডাটা সহলভ্য করা হয় তবে জিডিপিতে অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করে অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, যেসব দেশে কর কম সেসব দেশে জিডিপিও বাড়ে। তাই চানক্য’র ‘প্রজারা জীবন দিতে পারে কিন্তু কর নয়’ মাথায় রেখে এনবিআর’র এসআরও জারি করা উচিত। সার্বিকভাবে টেলিকমে জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে অন্তরায় ট্যাক্স, ভ্যাট, কাস্টম একইসঙ্গে তাদেরকেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পুরোপুরি অটোমেশন করা দরকার।
টেলিকম রিপোর্টারদের সংগঠন টিআরএনবি রবিবার দুপুরে প্যানপ্যাসিফিক সোনার গাঁ হোটেলে টিএরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় টেলিকম ট্যাক্সেসন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযাগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিশেষ আলোচক ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিমটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, টিআই নূরুল কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকের শুরুতে টেলিকম খাতের কর ও ব্যয়ের বিপরীতে জাতীয় অর্থনীতি ও স্মার্ট বাংলাদেশে অপারেটরদের অবদান বিষয়ে উপস্থাপনা পেশ করেন অ্যামটব মহাসচবি লে. কর্নেল মোহম্মদ জুলফিকার (অব)। তিনি জানান, বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ মোবাইল বাজার বাংলাদেশ। দেশের জিডিপিতে অন্তত ২.৮% অবদানের লক্ষ্য তাদের।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির সব জায়গাতে কর আরোপের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। টেলিকম খাতে দ্বৈত নয় বহুধাপ কর দিতে হয়। তাই ইন্টিলিজেন্ট স্মার্ট ট্যাক্সেসেন দরকার। বহুমাত্রিক ও দীর্ঘ মেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে।
টেলিকম বিশেষজ্ঞ টিআইএম নূরুল কবির বলেন, এনবিআর এর সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তায় দেশে এখন বিদিশী বিনিয়োগ কমছে।
সিগারেট আর টেলিকম দুটোতেই একই পরিমান ট্যাক্স কেন প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিওতে বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ।
ইন্টারনেটের উপর ট্যাক্স-ভ্যাট জিরো করে দিলে সেটা হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক। এজন্য এনবিআর-কে পুরোপুরি অটোমেশন করতে হবে।
বাংলালিংক এর ভারপ্রাপ্ত সিইও তৈমুর রহমান বলেন, আইসিটি ও টেলিকমে এখন কার্যত কোনো দূরত্ব নেই। তাই এক্ষেত্রে স্মার্ট ট্যাক্সেশন জরুরি। প্রতিবছর একই জায়গা থেকে বারবার ট্যাক্স নিচ্ছে, এর বদলে যদি ট্যাক্সের পরিধি বাড়ানো উচিত।
গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত বলেন, স্টেকহোল্ডারদের মত নিয়ে একটি সাপোর্টিং পলিসি গ্রহণ করতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে। গত বছরেই আমরা সরকারকে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। তাই আমরা সাপোর্টিং পলিসি চাই। ট্যাক্স রেসনালাইজেশন করলে বাজারে বিদ্যমান গ্যাপ মোচন করা সম্ভব হবে।
রবি’র চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, নন ট্যাক্স খাতে সর্বোচ্চ কর দিয়ে আমরা গৌরব করি। আমাদের কর দেয়ার সক্ষমতাও রয়েছে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য কর দরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী পর্যায়ে বাধা সৃষ্টির মতো কোনো কর থাকা উচিত নয়। আমাদের বিশেষ সম্মানীয় বলা হলেও বিশেষ কোনো সুবিধা দেয়া হয় না। উপরন্তু অনিষ্পত্তি বিষয়ে আমাদের দিন দিন দায় বাড়ছে।
এসময় গ্রামীণফোন সিইও ইয়াসির আজমানসহ টেলিকম খাতের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।