টেলিকম কর্মকর্তাদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ
শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে টেলিকমের সঙ্গে নিজের আবেগের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে অতিরিক্তি দায়িত্ব প্রাপ্তির পর মঙ্গলবার সচিবালয়ে সশরীর প্রথম অফিস শুরু করলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি জানিয়েছেন, যেদিন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মহায়দয়ের কাছ থেকে টেলিফোনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কাথা জানি তখন আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম। কারণ আমি এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
এই আবেগের পেছনের কাব্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী জানালেন, তার প্রয়াত বাবা ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে এইএচএসসি পাশ করে রাজশাহীর একটি ইনস্টিটিউটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় ১৯৫৭ সালে টেলিফন এক্সেঞ্জের অপারেটর পদে চাকরি পেয়ে দিনাজপুরে গিয়ে কাজে যোগ দেন। এরপর বগুড়া ও সান্তাহার, চুয়াডাঙ্গ ও নাটোর এক্সেঞ্জে টেলিফোন অপারেটর হিসেবে কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক আইসিটি উপদেষ্টার উদ্ধৃতি ‘যদি টেলিযোগাযাগ নদী হয় তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হচ্ছে নৌকা’ উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সজীব ওয়াজেদের মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে বিগত ১৫ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সাহস পেয়েছি। তাই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যারা এই খাতের উন্নয়নে কাজ করছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাই।
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে এমন কোথাও নেই যেখানে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ছোঁয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি উল্লেখ করে পলক বলেন, এখন আমরা ৫ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ড উইথ কনজিউম করি। এটা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। এটা একটা মিরাকল। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের জাদুতে পরিণত হয়েছে। এখন পুরো বিশ্ব বাংলাদেশকে অনুসরণ করে।
প্রসঙ্গত, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী এলাকা থেকেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কাজ দেখ-ভাল করছিলেন জুনাইদ আহমেদ পলক। নির্বাচনের বাকি থাকা ৩৪ দিন সরকারের রুটিন কাজ সম্পাদনে প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ও সম্মান রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। তুলে ধরেন স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় টেলিকম ও আইসিটির ভূমিকা গুরুত্ব।
এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারণ করে দেয়া ১৫টি খাতের নাম উল্লেখ করে পলক বলেন, ‘অ্যাকসেস টু ইলেকট্রিসিটির পর স্মার্ট গ্রিড, অ্যাকসেস টু এড্যুকেশনের পর দরকার স্মার্ট কোয়ালিটি এড্যুকেশন। অ্যাভেলভল হওয়ার পর এখন স্মার্ট ও রিল্যায়েবল ইন্টারনেট দরকার। এই ধরণের অসংখ্য কাজ আমাদের সামনে রয়েছে, যেগুলো আগামী ১৮ বছরে আমাদের করতে হবে। তবে আগামী ৩৪টি দিন আমাদের দৈনিন্দিন কাজ। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনারা সবাই সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। কেননা, পোস্ট অ্যান্ড টেলিকম যদি চলমান না থাকে, তাহলে সব কিছুই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। তাই আমরা অত্যন্ত সততার, স্বচ্ছতা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবো। যেন নির্বাচনকালীন আমাদের কোনো ধরনের যোগাযোগ এবং সেবা যাতে বিঘ্ন না ঘটে। আমাদের রাষ্ট্রীয়, সরকার এবং জনগণের কোনো সেবা যেন ব্যাহত না হয়।’
এই নির্দেশনা শুন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বদ্ধপরিকর।
এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে প্রতিমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। বৈঠকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.শাহজাহান মাহমুদ, বিটিসিএল ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসাইন, টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম হাবিবুর রহমান, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম, মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং অথরিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তরুন কান্তি সিকদার, বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক জগদীশ চন্দ্র মন্ডল এবং টেশিস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আশরাফ হোসেন সহসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং অধীন দপ্তর-সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।