সাহাস, অনুপ্রেরণা ও সুযোগ থাকলেই স্মার্ট উদ্যোক্তা হওয়া যায়। এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে ট্রিলয়ন ডলারের কোম্পানি থাকলেও সেখানে স্টার্টআপ সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। এই তিন সুযোগ থাকার কারণেই সরকার, বেসরকারি উদ্যোগ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫০ বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ খাত গড়ে উঠবে। দেশেই আজকের ৫০টি স্টার্টআপ মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি গড়ে উঠবে। তবে এই উন্নয়ন ইনক্লুসিভ স্মার্ট বাংলাদেশ থেকে গ্রামীণ ফোন স্টার্টআপ এক্সিলেটরের ৯ম বছরের ‘জেলায় জেলায় স্মার্ট উদ্যোক্তা’দের আগামী বছর জুনে আইডিয়া প্রকল্প থেকে ৬৪ জেলার স্মার্ট উদ্যোক্তাদের ১০ লাখ করে অনুদান দেয়া হবে। এছাড়াও স্টার্টআপ বাংলাদেশ থেকে প্রতি রাউন্ডে ৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হবে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে গ্রামীণ ফোনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘স্মার্ট উদ্যোক্তা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই প্রতিশ্রুতি দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এসময় উপস্থিত ৩৩ জন মেন্টরকে ঢাকার বাইরে থেকে আগামী ৫ বছরের মধ্যে অন্তত একটি বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ কোম্পানিতে পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমানের সঞ্চালনায় আলোনা শুরুর আগে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও সামি আহমেদ উদ্যোক্তাদের ওপর একটা উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “জেলায় জেলায় স্মার্ট উদ্যোক্তা” শীর্ষক রিজিওনাল ডিজাইন বুটক্যাম্প একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলো বাস্তবসম্মত এবং বাজারমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরতে পারবেন, এমন একটি উদ্যোগ গঠনে জিপি এক্সেলারেটর’এর সাথে অংশীদারিত্ব করতে পেরে স্টার্টআপ বাংলাদেশ আনন্দিত। এই বুটক্যাম্পগুলো শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ ও পরামর্শই প্রদান করবে না, বরং উদ্যোক্তাদের হাতে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ তুলে দেবে, যেগুলো কাজে লাগিয়ে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি যে উদ্যোগটি বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে”।
এসময় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)’র ফাইন্যান্স, একাউন্টস এন্ড রেভিনিউ ডিভিশনের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন স্মার্টআপ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মাদ আশিকুর রহমান, আইডিএলসি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রেজাউদ্দিন আহমেদ শেয়ার ট্রিপ সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাদিয়া হক, দ্য লিগ্যাল সার্কেল প্রতিষ্ঠাতা আনিতা গাজী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আইডিএলসি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রেজাউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৭-৮ বছর ধরে আমি বিনিয়োগ করছি। এটা ইতিবাচক। তবে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা সহজ হলেও স্টার্টআপগুলোর জন্য ততটা সহজ নয়। তাই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। একই সঙ্গে তাদের তহবিল প্রদান স্মুথ হওয়া দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মাদ আশিকুর রহমান জানান, তহবিল থাকলেও তা অব্যবহৃত রয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে কমিউনিকেশন ও করিনেশন এর অভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৩ নারীসহ ৭১জন উদ্যোক্তাকে ৮৬০ কোটি টাকার তহবিল থেকে ৬০ কোটি টাকা অর্থয়ান করা হয়েছে।
স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান দ্য লিগ্যাল সার্কেল প্রতিষ্ঠাতা আনিতা গাজী বলেন, কোহট থেকে প্রোপাইটারশিপে আনলিমিটেড ও লায়াবালেটির বিদেশী ভাষা আমরা শিখেছি। প্রযুক্তি এই শিক্ষণ প্রক্রিয় সহজ করেছে। তাই নতুন স্টার্টআপগুলোকে শুরুতেই বাজেটিং, লিগ্যাল সার্ভিস সাপোর্ট ও লাইসেন্সিং।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, “জেলায় জেলায় স্মার্ট উদ্যোক্তা” শীর্ষক এই আয়োজন মূলত আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা ও স্থানীয়ভাবে নানা সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করবে। ৩০ জন কমিউনিটি বিল্ডারের সমন্বয়ে এবং দেশের ২০ টি অঞ্চলে পিচ সেশনের মাধ্যমে আয়োজনটি সেরা ২০ জন ‘আইডিয়াপ্রেনর’ খুঁজে বের করবে এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করবে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে মাথায় রেখে এই আয়োজনটি ডিজাইন করা হয়েছে। উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী তরুণদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন, নেটওয়ার্কিং এবং ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সহযোগীতা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করবে রিজিওনাল ডিজাইন বুটক্যাম্প। এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের যুব জনসংখ্যার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট নেশন হওয়ার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক জানান, ২০১৫ সালে কার্যক্রম চালুর পর থেকে দেশের স্টার্টআপ খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে জিপি এক্সেলারেটর। এটি ৫০টি স্টার্টআপের মাধ্যমে ৫ লক্ষ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। এর আওতায় নানা সম্ভাবনাময় স্টার্টআপের বাজারমূল্য ১০গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারেরও বেশি ভ্যালুয়েশন অর্জন করেছে। এ থেকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে জিপি এক্সেলারেটর’এর অবদান অনুধাবন করা যায়। তিনি বলেন, সফল স্টার্টআপ গড়তে হলে শতাধিক সফল সিইও গড়ে তুলতে হবে।