লেজার রশ্মীর প্রজাপতির ডানায় প্রযুক্তি ছাপিয়ে সাংস্কৃতিক বন্ধনে চীন-বাংলার স্মার্ট মৈত্রী রচিত হলো রাজধানীর আইসিসিবি’র নবরত্রীতে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রযুক্তি-সংস্কৃতির নান্দনিক উপস্থাপনায় নিজেদের উপস্থিতির রজত পূর্তী উৎসবে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের পর স্মার্ট বাংলাদেশেও নেতৃত্ব দেয়ার প্রত্যয় জানালো দেশটি বিশ্বজয়ী প্রযুক্তি ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে।
অভ্যাগত অতিথিদের টেবিলে টেবিলে কেক পরিবেশন করার পর দুই মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আনুষ্ঠানিক কেক কেটে ২৫ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেন হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও ও হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্যান জুনফেং।
‘২৫ ইয়ারস অব টুগেদারনেস, জার্নি অব ট্রাস্ট, সাপোর্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারিং বাংলাদেশ” প্রত্যয়ে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশে নিজেদের কার্যক্রম ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকল সহযোগী, গ্রাহক ও এই খাতের স্টেকহোল্ডারদের অপরিসীম সহযোগিতা, বিশ্বাস ও নির্দেশনার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি। জুন ফেং বলেন, “বহু বছর আগে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে যাত্রা শুরু করে হুয়াওয়ে। উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বিকাশের পথে আমরা সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিলাম। কর্মসংস্থান তৈরি, লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা ও আইসিটি ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন ছাড়াও আমরা গত ২৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছি। সামনের দিনেও এই ধারা অব্যহত থাকবে। আমাদের ওপর অটুট আস্থা রাখায় বাংলাদেশ ও এই দেশের মানুষের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। অবিশ্বাস্য এই যাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল রূপান্তরে অবদান রাখতে নিরলস কাজ করে যাবো।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বক্তব্যে আয়ের এক-পঞ্চমাংশ গবেষণায় বিনিয়োগের জন্য অভিনন্দন জানান। ম্যান্ডারিন ভাষায় ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করার আগে তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। হওয়াওয়ে সেই বন্ধুত্বকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তারা ব্যবসার পাশাপাশি সমাজিক দায়বদ্ধতাতেও বেশ এগিয়ে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে আমাদের মানুষের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে উন্নত বাংলাদেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এ যাত্রায় আমরা চীনের মতো বন্ধুর কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছি। বিশ্ব মানবতার জন্য আমরা এগিয়ে যেতে চাই এবং এজন্য আমাদের উদ্ভাবনী ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার সকল কার্যক্রমের জন্য ঢাকাকে সদর দপ্তর হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য আমি হুয়াওয়েকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। আমি হুয়াওয়ের সাফল্য কামনা করছি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে হুয়ওয়ের নতুন নতুন উদ্ভাবন ও মেধাসত্বে এগিয়ে থাকার প্রশংসা করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি ২০১৯ সালে ইউপ্রো পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আইসিটি অবকাঠামো ও স্মার্ট ডিভাইস প্রদানকারী হিসেবে হুয়াওয়ের বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট পথে হাটছে জানিয়ে এক্ষেত্রে স্মার্ট কানেক্টিভিটি সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে বলে মত দেন তিনি। তিনি বলেন, বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নের পথ ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ পৌছে দেয়া হয়েছে। দুর্গম দ্বীপ. চরাঞ্চল ও হাওরসহ দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ এলাকায় ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে এবং ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কাজ চলছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৩০ হাজার জিবিপএস ব্যান্ড উইথ ব্যবহৃত হবে। ডিজিটাল সংযুক্তির সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাড়িয়েই নতুন প্রজন্মের হাত ধরে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইও ওয়েন।
আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বিটিরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, আইসিটি বিভগের সচিব সামসুল আরেফিন।
প্রসঙ্গত, ‘ইন বাংলাদেশ, ফর বাংলাদেশ’ এই মূলমন্ত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হুয়াওয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল রূপান্তরে যথাসম্ভব অবদান রেখে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ২৫ বছর ধরে আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিভিন্ন সেবা ও উদ্ভাবনী সমাধান, আইসিটি দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ইকোসিস্টেম বিকাশ ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
টেলিকম খাতের জন্য টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে ও ফাইভজি প্রযুক্তির অধিগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হুয়াওয়ে। ২০১৮ সালে দেশ যখন মাত্র ফোরজি যুগে প্রবেশ করেছে তখন প্রতিষ্ঠানটি ফাইভজি ট্রায়াল সম্পন্ন করে। একই সাথে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ফাইভজি প্রযুক্তি উন্মোচনের ক্ষেত্রে বিশ্বের অগ্রগামী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে টেলিটককে সহযোগিতা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২৩ -এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বাধুনিক ৫.৫জি প্রযুক্তি ও এই খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইউজ কেস (ডিজিটাল রূপান্তর) প্রদর্শন করে। এছাড়া, হুয়াওয়ে ফাইবারের মাধ্যমে ১৫ হাজারেরও বেশি বেইজ ট্রান্সসিভার স্টেশনে (বিটিএস) সংযুক্ত করতে সহযোগিতা করেছে।
২০১৮ সালে হুয়াওয়ে বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল পাওয়ার’ সেবা দেয়া শুরু করে এবং ময়মনসিংহে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ একাধিক বৃহৎ আকারের আইপিপি এবং রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এখন পর্যন্ত, হুয়াওয়ে এর নিজস্ব সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন ইউনিট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে করতে সাহায্য করেছে যার ফলে ১৮০ হাজার টন কার্বন নিঃসরণ কমেছে, যা ২৫০ হাজার গাছ লাগানোর সমান।
এছাড়া, ফাইন্যান্স, শিক্ষা, গভর্ন্যান্স, স্বাস্থ্য, মিডিয়া, উৎপাদন, পরিবহণ ও অন্যান্য খাতের জন্য সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও এআই-নির্ভর ক্লাউড সল্যুশন প্রদান করছে হুয়াওয়ে।
অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে নিজেদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে হুয়াওয়ে। একই সাথে, পুরোপুরি কানেক্টেড ও ইনটেলিজেন্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সমাধান (সল্যুশন) নিশ্চিত করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি, যেন সবাই নিরাপদ ও কানেক্টেড (সংযুক্ত) থেকে স্মার্ট সোসাইটির সুফল ভোগ করতে পারে।