স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি ও স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রির কোনো বিকল্প নেই: আইইবি
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি প্রতিপাদ্যে শনিবার সকালে রাজধানীর রমনায় দেশের প্রাচীন পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) ক্যাম্পাসেই বসছে প্রতিষ্ঠানের ৬১ তম সম্মেলন। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর হিসেবে তার সামনে ১০ দফা দাবি তুলে ধরবে প্রকৌশলীদের জাতীয় সংগঠনটি। সম্মেলন উদ্বোধনের পর স্মার্ট বাংলাদেশের চালিকা শক্তি হিসেবে রূপান্তরিত প্রযুক্তি প্রকৌশল বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সেমিনার।
শুক্রবার সম্মেলন ভ্যেনুতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন আইইবির মুখপাত্র ও সম্মানি সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস. এম. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সভাপতি সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশ “স্মার্ট-বাংলাদেশ” বিনির্মাণের পথে হাঁটছে। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল জ্ঞান ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার যে মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি ও স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রির কোনো বিকল্প নেই। দেশপ্রেমের অনির্বাণ চেতনাকে বুকে ধারণ করে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট’ গভার্মেন্ট, স্মার্ট’ ইকোনমির মাধ্যমে স্মার্ট’ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইইবি’র নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। এই সকল বিষয়কে বিবেচনা করে এবারের সম্মেলন সাজানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিবলু, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ, ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার কাজী খায়রুল বাশার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, ইঞ্জিনিয়ার অমিত কুমার চক্রবর্তী, ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম হাজারী এবং ইঞ্জিনিয়ার রনক আহসান, ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসাইন,সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামসহ আইইবির বিভিন্ন বিভাগ, কেন্দ্র এবং উপকেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করছি বিভিন্ন বড়-বড় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পে কারিগরি জ্ঞানহীন একটি বিশেষ ক্যাডারের চাকুরীরত বা অবসর প্রাপ্ত সদস্যদের পিডি হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। কারিগরি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পে কারিগরি শিক্ষা ও জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগের কারণে প্রকল্পের গতি ব্যাহত হবে। কারিগরী জ্ঞানহীন বা প্রকৌশল কাজে চর্চাবিহীন বক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য।
ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, জজনগণ স্বপ্ন দেখে, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন৷ দেশের প্রকৌশলীরা প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে সেই স্বপ্নগুলোর বাস্তব রুপ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের রুপকার এবং প্রকৌশলীরা স্বপ্নের কারিগর।
দেশের প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়নে আইইবির সম্মানি সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু সাংবাদিকদের সামনে কয়েকটি দাবি আইইবির পক্ষে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ দেশের প্রকৌশলীদের প্রতিনিধিত্বকারী সর্বোচ্চ জাতীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান। আইইবি মনে করে, জবাবদিহিতামূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার জন্য প্রস্তুতকৃত দাবিনামা সংবাদ কর্মীদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
সম্মেলনে যেসব দাবি পেশ করা হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে
•প্রকৌশল সংস্থাসমূহে শীর্ষপদগুলোতে অপ্রকৌশলী ব্যক্তিদের স্থলে প্রকৌশলীদের পদায়ন করা৷
•প্রকৌশলীদের পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করা ।
•প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রকৌশল উইং সৃষ্টি করা।
•‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ এ প্রধান প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত মর্যাদা অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত করা।
•কারিগরি জ্ঞানহীন বা প্রকৌশল কাজে চর্চাবিহীন ব্যক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা।
•’এলজিইডি’, ‘টেক্সটাইল’ ‘কৃষি কৌশল’ এবং ‘আইসিটি’ ক্যাডার বাস্তবায়ন করা জরুরী এবং ২০০৬ সাল থেকে বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের বন্ধকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা।
•বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ‘সিনিয়র সার্ভিস পুল’ অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া।
•পলিটেকনিক শিক্ষকদের বর্তমান চাকুরী কাঠামো পরিবর্তন করা ।
•বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)’র নিয়ন্ত্রণাধীন সকল বিদ্যুৎ সেক্টরকে একই আম্ব্রেলাভুক্ত করা ।
•সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি জেলার ডিসি কার্যালয়ে একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং প্রতিটি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একজন সহকারী প্রকৌশলী ও একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক সিনিয়র প্রকৌশলীরা প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জুনিয়র কর্মকর্তাদের দিয়ে তাদের কাজ পরিদর্শন করা সিনিয়র প্রকৌশলীদের জন্য অবমাননাকর। সুতরাং উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করা।