বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শুক্রবার রাজধানীর ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (আইইউবি) এবং অনলাইনে একসঙ্গে শুরু হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আয়োজিত নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্ব।
টানা ৩৬ ঘণ্টার চ্যালেঞ্জ শেষে এখন ফলাফলের অপেক্ষা করছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার ২১০ প্রতিযোগী। এদের কেউ স্কুল, কেউবা কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এআইইউবি’র ক্যাফেটারিয়া পাঁচ জন করে দল বেঁধে ল্যাপটপ সামনে নিয়ে হ্যাকাথনে অংশ নেয় ৫০টি দল। নাসা’র রকেটের ছবিযুক্ত নীল টি-শার্ট গায়ে তাদেরকে দেখা যায় গভীর চিন্তায় মগ্ন। কাউকে কাউকে দেখা যায় নক কামড়াতে কামড়াতে ভেবেছে। কেউ আবার পায়াচারি করছে। মাঝে মাঝে তাদের জট খুলতে এগিয়ে যান মেন্টররা। পুরো আবহটাই যেনো হয়ে ওঠে উদ্ভাবনার-আবিষ্কারের। এমন দারুণ পরিবেশে প্রতিযোগিতায় জয়ের পরিকল্পনার নকশা করেছে শিশু-কিশোরেরা। কোডিং করে তা তৈরি করে আবার ভিডিও তৈরি করেছে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে। পরের ৬ ঘণ্টায় তা ঝালিয়ে দেখেছে সেরাটা দিতে। ব্যাবহার করছে, এআর, ভিআর, অগমেন্ডেড রিয়েলিটি ডিভাইস। শেষ দিকে তাদের দেখা গেলো ভিডিও তৈরির ফাঁকে ফাঁকে দেখছে বাংলাদেশ-আফগানস্তান ম্যাচ।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফল যাই হোক না কেন প্রযুক্তির মাঠে এই শিক্ষার্থীরাই ২০২৩ সালের বিশ্ব আসরে ফের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের হ্যাট্রিক উদযাপন করবে বলে আশাবাদী আয়োজকরা। এজন্য এবার এক কোটি শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি দুই লাখ শিক্ষার্থীর সরাসরি ও প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার মধ্য দিয়ে বিস্তৃত পরিসরে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান বললেন, এবার নানা বৈচিত্রময় আইডিয়া এসেছে প্রতিযোগিতার কাছে। নবীন-প্রবীন ৩৫জন বিচারক চুল চেরা বিশ্লেষণ করছেন। আশা করি তাদের বাছাই করা প্রকল্প বিশ্বজয় করবে ইনশাআল্লাহ।
নাসা’র নির্ধারিত ৩০টি চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজেদের ভাবনা থেকে তারা তৈরি করেছেন গেইম, অ্যাপস, ডাটা সল্যুশন এবং হার্ডওয়্যার সল্যুশন। শনিবার দুপুরে নির্ধারিত সময়ে চ্যালেঞ্জ পূরণ করে তৈরি করেছেন ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও। বিকেল ৩টার মধ্যে তা আবার জমাও দিয়েছেন প্রতিযোগীরা। বিচারকদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, জমা পড়া বেশির ভাগ প্রকল্পই গেইম। নাসা’র চ্যালেঞ্জ মানার জন্যই এমনটা হয়েছে। তবে এতে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে কি না তা নিয়ে ভাবার পরামর্শ তাদের। তবে নিয়মের মধ্যেও বেশ কিছু ব্যতিক্রমী ও তাক লাগানো প্রকল্পও আছে বলে জানিয়েছেন বিচারকরা। তবে ফলাফল ঘোষণার আগে তা প্রকাশ করতে চাননি তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, খাত সংশ্লিষ্ট বোদ্ধা, শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত বিচারক প্যানেলে এবার রয়েছেন গত বছর ‘মোস্ট ইন্সপিরেশনাল’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ‘টিম ডায়মন্ডস’। এই দলের দলের দলনেতা তিশা খন্দকার, ইঞ্জামামুল হক এবং মুনিম আহমেদের কাছে প্রতিগেযাগীরা কেমন করেছে জানতে চাইলে সবাই বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এদের মধ্যে সিস্টেম আর্কিটেক্ট ইঞ্জামামুল হক সনেট বললেন, গত বছর এই জায়াগাতেই আমি ছিলাম প্রতিযোগী। আজ বিচারক। খুবই সম্মনিত বোধ করছি। আমি যেই প্রজেক্ট গুলো দেখেছি সেগুলো আমাদের সময়ের চাইতে টেকনোলজিক্যালি বেশি আপডেটেড। ওরা খুব ভালো প্রজেক্ট করছে। তাই হ্যাট্রিক বিজয়ের খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিযোগীদের সঙ্গে রাতভর অপেক্ষা করা অভিভাবকরাও এখন অপেক্ষায় ফলাফলের। জমা পড়া সল্যুশন থেকে ৯জন চ্যাম্পিয়ন সহ ২৭ জনের নাম ঘোষণা করা হবে সন্ধ্যায়। বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা দীপু মনি।