আঠারো দশকের ফরাসি দার্শনিক জঁ-জাক রুসো কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটের দক্ষিণ আফ্রিকান নাইটস রাইলি রসকো রুশো নয়; এবার বিশ্বজয় করছেন বাংলাদেশের রুশো। জিনিয়াস অলিম্পিয়াড, নাসা ভ্রমণ, ডাটা সায়েন্সে পারফরমেন্স বেজড স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ পাওয়ার এবার বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সী ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ (অনারারি) হলেন বাংলাদেশের মাহের আলী রুশো।
মঙ্গলবার দুপুরে মেইলে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স কর্তৃপক্ষ। এর ফলে চিকিৎসক দম্পতি ডা. মোহাম্মদ আলী এবং ডা. রুমা আক্তারের সন্তান বাংলাদেশের রুশো সবচেয়ে কম বয়সে বিজ্ঞানে ডক্টরেট হওয়ার ইতিহাস গড়লেন এবার।
মাত্র ১৫ বছরে বিজ্ঞানে এমন স্বীকৃতি অর্জনের নজির নেই বিশ্বে। চিকিৎসক দম্পতি ডা. মোহাম্মদ আলী এবং ডা. রুমা আক্তারের সন্তান রুশো। রুশোর হাইপো থিসিস গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রযুক্তির প্রয়োগে এক সপ্তাহ আগেই ভূমিকম্প আঁচ করা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিঠি দেখিয়ে মঙ্গলবার ডিজিবাংলাটেক.নিউজ- কে রুশোর গর্বিত পিতা ডা. মোহাম্মদ আলী। চাইল্ড প্রোডিজি হিসেবে ‘ইন্ট্রোডাকশন টু মেশিন লার্নিং অ্যাপ্রোচ অব আর্থকুয়্যেক ডিটেকশন’ গবেষণা পত্রের জন্য এই অনারারি ডক্টরেট লাভ করেছেন তিনি।
উদ্দাম তারুণ্যের এই কিশোরের অর্জনের পালক সত্যি বিস্ময়ের। অধ্যাবসায় আর হার না মানা মানসিকতায় মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে দূরে থেকেও কেবল ইন্টারনেটের শক্তিতে একের পর এক জয় করছেন ‘সাফল্য’। শতভাগ বৃত্তি নিয়ে আগামী জুনে যাচ্ছেন গবেষণা ভিত্তিক প্রতিযোগিতা ‘জিনিয়াস অলিম্পিয়াড’ এর ফাইনালিস্ট হিসেবে। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে একইসময়ে ফ্লোরিডার নাসা কার্যলয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন তিনি।
চলতি বছরের মার্চে ওপেন ক্যাটাগরিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জেনে নিজেই আবেদন করে। গবেষণার অংশ নিয়ে ব্লু-বেইন প্রজেক্টের অংশ হিসেবে তেজস্কৃীয় মৌল দ্রুত পরিবর্তন ঘটনায় তখন ইঁদুর এর গবেষণা নিয়ে নিজ নামেই একটি মডেল তৈরি করেন তিনি।
এরমইমধ্যে গণিত ও বিজ্ঞান-বিষয়ক অলিম্পিয়াডে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশের মাহের আলী রুশো। পড়াশোনা, গবেষণা আর ভিডিও গেম তৈরি নিয়েই রুশোর পৃথিবী। নিজের পড়াশোনার ঘরটাকেই আস্ত একটা গবেষণাগার বানিয়ে নিয়েছে ক্ষুদে এই বিজ্ঞানী। ১০ বছর বয়সে, যখন সে গ্রেড ফাইভের ছাত্র- ইউটিউবে ‘নাক্ষত্রিক স্থান এবং জ্যোতি-পদার্থবিদ্যা’ শিরোনামে একটি ভিডিও তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে, আগ্রহ জাগায় বিজ্ঞান নিয়ে। তখন থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। মাত্র ১১ বছর বয়সেই রপ্ত করে ফেলে ক্যালকুলাস এবং জ্যামিতিক বিভিন্ন সমাধান। বছর না ঘুরতেই হাত বাড়ায় কলেজপর্যায়ের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে।
ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর রুশো একান্ত সাক্ষাৎকারে ডিজিবাংলা-কে বলেন, করোনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তবে এর সঙ্গে আরো একটি ঘটনা আছে। তা হলো ২০১৯ ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় মনিপুর স্কুল ম্যাথ অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে ক্লাসে পেছনে বসা সহপাঠীদের কারণে তিনি বাদ পড়েছিলেন। এরপর জেদ হয় অলিম্পিয়াডে ভালো করার। ২০২০ সালে কোভিড আসায় হতাশ হই। তখন গুগল সার্চ করে অনেক কিছু শিখি। ২০২১ সেন্ট জোসেফ ক্লাবে ৭ম শ্রেণীতে পাই টুর্নামেন্টে অংশ নেই। ফলাফল দেয়ার একমাস পড় গুগল সার্চ করে দেখি আমি নটরডেম স্কুলের প্রতিযোগিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এরপর ড. জাফর ইকবাল ও ড. কায়কোবাদ স্যারের অলিম্পিয়াড বিষয়ক বই পড়ে অনেক কিছু শিখেছি। এখন বাংলাদেশে বসেই কলোরোডা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছি।
ছেলের অর্জন নিয়ে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, বছরখানেক আগে রুশো রোবটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর একটি গবেষণাপত্র লিখে, যা রিসার্চ গেট নামে একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের শিক্ষার্থীদের রিসার্চগুলোকে পেছনে ফেলে সেটি প্রথম হয়ে যায়। পরে সেটি ভারতের ইন্টারন্যাশনাল সাইন্স অব জার্নালসহ বিশ্বের ২৫টা জার্নালও প্রকাশ করে। এরপর সর্বশেষ তিন মাসে ছয়টা আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র লিখে, যা প্রত্যেকটিই পাঁচ থেকে দশটি জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। এগুলো মূলত ম্যাথ, ফিজিক্স, রোবটিক, কোয়ান্টাম ড্রিম ও টাইম ট্রাভেলের ওপর লেখা।
ঢাকা মেডিকেলে ২০০৭ সালের ১৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন ড. মাহের আলী রুশো। তার পৈত্রিক নিবাস নওগাঁ।