সম্প্রতি তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে এই তালিকার গেজেটে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডই দেওয়া যাবে।
এরপর বিষয়টি নিয়ে তীর্যক মন্তব্য ও পর্যালোচনা প্রকাশ পেতে থাকে রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান থেকে। এমনই একটি অভিমতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোসমূহ থেকে কোনোরুপ তথ্য পাওয়া যাবে না মর্মে যে ধারণাটি চাউর হয় তা ‘বানোয়াট ও মনগড়া’ এবং এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে ‘জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো’ হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইসিটি বিভাগ।
রবিবার বিভাগের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে ‘বিভিন্ন মহলের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ’ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং উক্ত পরিকাঠামোসমূহের নিরাপত্তা সামান্যতম বিঘ্নিত হলে জনগণের বিপুল ক্ষতির কারণ হবে। এর সাথে জনগণের তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত অধিকার ব্যাঘাত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বা তথ্য প্রাপ্তির অধিকারের সাথে ইহা সাংঘর্ষিক নয়’।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ধারণাগুলো কীভাবে বানোয়াট ও বিভ্রান্তির তা তুলে ধরে একটি ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে। সেখান বলা হয়েছে- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (Critical Information Infrastructure) হচ্ছে সরকার কর্তৃক ঘোষিত এইরূপ কোনো বাহ্যিক বা ভার্চুয়াল তথ্য পরিকাঠামো, যাহা কোনো তথ্য-উপাত্ত বা কোনো ইলেকট্রনিক তথ্য নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চারণ বা সংরক্ষণ করে এবং যাহা ক্ষতিগ্রস্ত বা সংকটাপন্ন হলে – (অ) জননিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বা জনস্বাস্থ্য,
(আ) জাতীয় নিরাপত্তা বা রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা বা সার্বভৌমত্বের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ১৫ ধারার বিধান অনুসারে সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা উপরিউক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করে ২৯টি প্রতিষ্ঠান কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসাবে ঘোষণা করেছে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে সরকার ও জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ও আর্থিক তথ্যাবলী সংরক্ষিত থাকায় এদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো সমূহের আইটি অডিট সম্পন্ন, যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণ, সঠিক মানসম্পন্ন নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ , যথাযথ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানব সম্পদ নিয়োগ ইত্যাদি কার্যক্রমের দ্বারা পরিকাঠামোসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসাধারণকে নিরাপদ ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা সমূহ পৌঁছে দেওয়াই এই ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য পৃথিবীর অনেক দেশ যথা: ভারত, কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোসমূহ ( Critical Information Infrastructures) চিহ্নিত আছে।