রবিবার। হোটেল র্যাডিসন ব্লু। ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা ছুঁই ছুঁই। মঞ্চে রাখা ট্যাবে হাতের স্পর্শ করলেন প্রধানমন্ত্রীর আইসটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট ডিজিটাল লেনদেনে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। এসময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
নিজেদের মেধা ও মনন কাজে লাগিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তর হয়েছে উল্লেখ করে উদ্বোধনী বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ঘোষণার পর আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এসেছিলো। তারা বাস্তবায়নের সমাধান দিতে পারেনি। এটা আমরাই করেছি। আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোই সেবা ডিজিটাল করেছে। আমি তৃণমূলে সেবা নিয়ে যেতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করতে বলেছি। এটা বিশ্বে অনন্য মডেল।
কারো প্রেসকিপশন ছাড়াই সবার আগে আন্তঃলেনদেনের উদ্ভাবনী প্লাটফর্ম ‘বিনিময়’ সবাইকে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আগামী তিনি-চার বছরে শতভাগ মানুষ ব্যংক হিসাবধারী হবে এবং এটি ক্যাশলেস ভাবেই হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন জয়।
আমি প্রথমে কষ্ট পেয়েছিলাম : পলক
নিজ মন্ত্রণালয় থেকে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর তা একেক মন্ত্রণালয়ের কাছে সময় কষ্ট লাগতো তবে এখন তা সয়ে গেছে বলে মনে করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে ৯৯৯ সেবা হস্তান্তরের পর আন্তঃলেনদেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি দুঃখবোধ প্রকাশ করে বিভাগটি হোল অব গভের্নেন্স অ্যাপ্রোচে কাজ করছে বলে জানান পলক।
আন্তঃলেনদেন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘বিনিময়’ প্লাটফর্মে যুক্ত হতে সংশ্লিষ্টদের বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করে তিনি বলেন, এটা সবচেয়ে স্বাধীন ও সহজ প্লাটফর্ম। এটি জালিয়াতি ও প্রতারণা রোধ করবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তিটা গড়ে উঠেছে ৪টি ভিতের ওপর। জয় ভাইয়ের নির্দেশনায় ৩০৬টি করণীয় ঠিক করি। তৈরি হয় আইসিট নীতিমালা। এখন সব মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল রূপান্তরে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র জয় বলেন, বর্তমানে প্রায় ৫/৬ কোটি গ্রামবাসীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও জয়লাভ করতে পারে, তবে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে এবং সরকারের পরবর্তী মেয়াদে তারা ক্যাশলেস সমাজে বাস করবেন।
সজীব বলেন, নেটওয়ার্ক সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে, সরকারের সেবা ডিজিটালাইজড হয়েছে, প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে, বাংলাদেশে বৃহৎ আইটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এখন দেশেই ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সেট ও কম্পিউটার মেমোরি চিপস উৎপন্ন হচ্ছে এবং এগুলো রফতনি শুরু হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা ছিল। তখন এদেশে ডিজিটালের কিছুই ছিল না। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করতে চেয়েছিল, তবে জটিলতার কারণে বাংলাদেশ সে পথে যায়নি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজেরা করেছি। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিটি পদক্ষেপই বাংলাদেশের নিজের। কোনো বিদেশি দাতা সংস্থার নয়।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইন্টারনেট ছিল। নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্টাকচার করা ছিল আমাদের প্রথম কাজ। ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক নিয়েছি। এটার জন্য সারাবিশ্বে প্রশংসা পেয়েছি। গ্রামের মানুষের কাছে তো স্মার্টফোন নেই তারা ডিজিটাল প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করবে? তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে এক বছরের মধ্যে ডিজিটাল সেন্টার বানানো হয়েছে। এরপর সরকারি সেবা ডিজিটাল করা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সরকারি সব সেবা শতভাগ ডিজিটাইজ করা আমাদের লক্ষ্য। এখানেও কোনো বিদেশি সংস্থা নেই।
তিনি আরও বলেন, বিদেশিরা ভেবেছিল তারা আমাদের ডিজিটাল করতে কী সমস্যা সেসব বলে দেবে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব। কিন্তু আমাদের মেধা আছে। আইটি আমরা জানি, বাংলাদেশকে ডিজিটাইজ আমরাই করেছি। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করে নিজেরাই সমাধান করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আইটি ইন্ডাস্ট্রি বানানোর লক্ষ্যে বছরে ৪০/৫০ হাজার নাগরিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন দেশে ভালো আইটি সেক্টর তৈরি হয়েছে। আমরা নিজেরাই সব করতে পারছি। দেশের ভেতর সরকারি-বেসরকারি খাতে আইটির যেসব কাজ চলছে অধিকাংশ বাংলাদেশি কোম্পানি সেখানে সার্ভিস দিতে পারছে। বিদেশ থেকে কোম্পানি আনতে হচ্ছে না, ডলারও খরচ হচ্ছে না। কোনো দেশ টেকনোলজিতে এত দ্রুত উন্নতি করেনি।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ডিজিটাল সেবার অন্যতম ধাপ ক্যাশলেস। আমাদের দেশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও ক্যাশে লেনদেন করে। এখানে ঝুঁকি থাকে। সারাক্ষণ ক্যাশ হাতে রাখা যায় না। দুর্নীতি, সন্ত্রাসে লেনদেন চলে আসে যতক্ষণ ক্যাশ লেনদেন চলে। এজন্য ক্যাশলেস সোসাইটি আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ইন্টারঅপারেবল লেনদেন প্লাটফর্ম বিনিময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সেবা। এখানে লেনদেন যত বাড়বে তত ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে আমরা এগুতে পারব।