বিচার কাজে বিভিন্ন ডিজিটাল তথ্যকেও সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ যুক্ত হলো ব্রিটিশ আমলের সাক্ষ্য আইনের সংশোধনীতে। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে পাস হয় ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট ১৮৭২ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২২’। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই সংশোধনী পাস হওয়ার ফলে মামলার বিচারে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনেরও সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি কেউ যাতে ভুয়া বা জাল সাক্ষ্যপ্রমাণ ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির করতে না পারে তার সুযোগ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে আদালত যদি মনে করে যে, কোথাও আপত্তিজনক কিছু আছে অথবা কেউ যদি আপত্তি তোলে, তাহলে ওই সাক্ষ্য-প্রমাণের ফরেনসিক পরীক্ষা করা যাবে।
বিএনপিসহ বিরোধী দলের বেশিরভাগ সদস্যই আইন পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রশংসা করেন। তবে এর কোনও কোনও ধারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা
তিনি বলেন, ‘এই আইনের খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আইনটা কার হাতে থাকবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। দেখা যায়, সে আইনটি ব্যবহার করা হয় প্রতিপক্ষকে দমন করার কাজে। শুধু তাই নয়, এটি ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ফেসবুকারদের বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ডেটা সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে, এটি মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত করবে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সাক্ষ্য আইনে ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ, এখন ‘ডিপ ফেক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজনের ছবির জায়গায় আরেকজনের ছবি ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করা যায়।’
রুমিনের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘তথ্য সুরক্ষা আইন পাস করার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আবার আলোচনা করা হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এই আইন করা হবে। কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নয়, নাগরিকের তথ্য যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেজন্য এই আইন করা হচ্ছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দলকে টার্গেট করে এই আইন করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এটি করা হয়েছে। এই আইনের অপব্যবহার হয়েছে, তা তারা স্বীকার করে শোধরানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) পাস করেছিল। এরজন্য তারা কখনও দুঃখ প্রকাশও করেনি।’
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ল’স (রিভিশন অ্যান্ড ডিক্লেরেশন) অ্যাক্ট ১৯৭৩ (অ্যাক্ট নং. এইট অব ১৯৭৩) প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীনতাপূর্ব আইনগুলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও অভিযোজনপূর্বক বহাল রাখা হয়েছে। রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬ অনুযায়ী বিদ্যমান আইনসমূহ এ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসনিক এখতিয়ারাধীন। কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ হতে প্রচলিত কোনো আইনকে সংশোধন করার প্রয়োজন হলে বা নতুন আইন প্রণয়ন করতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রেরণ করা হলে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ হতে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।