নিহত হাসনা হেনা ও আকলিমা ইন্টারনেট কর্মী
মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আকস্মিক অগ্নিকাণ্টে ২ নারী ইন্টারনেট কর্মী ও ১জন প্রকৌশলী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, অগ্নিকাণ্ডের সময় আতঙ্কিত এক নারী নবমতলার বারান্দা দিয়ে নামতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে নিহত হয়েছেন। জানাগেছে, নিহত নারীর নাম হাসনা হেনা (২৭)। তিনি ওই ভবনের নয় ও দশ তলায় অবস্থিত রেইস অনলাইন লিমিটেডের অরবিট নেটওয়ার্কিংয়ের কর্মী। এরপর অরবিট ইন্টারনেটে (রেস অনলাইন) বিলিং ও সাপোর্ট এ কর্মরত একই প্রতিষ্ঠানের আকলিমা রহমান (২৪) অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়। এছাড়াও আগুন লাগার প্রায় সাত ঘণ্টা পর ষাটোর্ধ্ব প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম (৬২) মারা গেছেন। এই মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে মরহুমদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হব।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ীম ভবন থেকে অচেতন অবস্থায় সাইফ পাওয়াটেক কোম্পানির প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম উদ্ধারের পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে জানান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রফিকুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়াও এর আধা ঘণ্টা আগে আগুন লাগার প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত ১১টা ৩৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৬৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে অচেতন অবস্থায় নামিয়ে আনেন।
এর আগে সন্ধ্যায় মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্রের কর্মী মো. আরিফুল জানান, তাদের হাসপাতালে একজন নারীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার বয়স ত্রিশের মতো হতে পারে। পরে আর্থ কমিনিউকেশনের নেটওয়ার্কিং সেন্টার (Noc) কোম্পানির অপারেশন অফিসার তারেক হোসাইন জানিয়েছেন , ৯ ও ১০ তলায় তাদের অফিস। তিনটি কোম্পানি এক মালিকের। অরবিট নেটওয়ার্কিং কোম্পানিতে টেলি সেলস সেকশনে কাজ করতেন হাসনা হেনা। তার অফিস ছিল নবম তলায়। তিনি রশি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে মারা যান।
এছাড়া ওপর থেকে দড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে ও মাথায় কাচ পড়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন; ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছেন অনেকেই। তাছাড়াও অসমর্থিত একটি সূত জানিয়েছে রেইস অনলাইনের একজন নিহত হলেও আরো একজন নারীকে পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি আরও চার জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে রাত ৯টায় দুই জনকে সেখানে নেওয়া হয়। তাদের একজন-কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাওসিন আহামেদ রাকিব (২৭)। তিনি আর্থ টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কিং সেকশন কাজ করতেন। অপরজন সৈয়দ মেহেদী হাসান (২৭)। তিনি নবম তলায় রেশ নামে নেটওয়ার্কিং কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতেন। পরে আরও দুই জনকে উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তারা হলেন-খাজা টাওয়ারের ১৩ তলার সাইফ পাওয়ার টেকের ডিজিএম এইচ এম আব্দুস সবুর (৪৩) ও তার গাড়ি চালক মো. রফিকুল ইসলাম (৪৫)।
এদিকে খাজা টাওয়ারে দুইটি ডাটা সেন্টারে রাউটার ও সার্ভার রেখে রেইস আইটিসহ বেশ কয়েকটি আইএসপি কোম্পানি একই বিল্ডিংয়ে স্থাপিত ১০টি আইআইজি’র কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ নিয়ে সারাদেশে সেবা দেয়। আগুন লাগার পর থেকেই ব্যান্ডউইথ না পাওয়ায় তাদের সেবা দারুণ ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেছেন, ভবনের লেভেল থ্রি, ম্যাক্সহাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট ও উইনস্ট্রিম আইআইজি পুড়ে গেছে। ফলে ইতিমধ্যে আমরা ৬০ শতাংশের বেশি ব্যান্ডউইথ হারিয়েছি।আগামীকালে মধ্যে যেন পুলিশ আমাদের কাছে ইকুইপমেন্ট এবং ফ্লোর হ্যান্ডওভার করে ,তাহলেই কেবল আমরা তাড়াতাড়ি ইন্টারনেট রিস্টোর করতে পারব। তা না হলে ইন্টারনেটের গতি কবে ফিরবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাদের কী ধরণেই ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা আমরা নির্ণয় করার চেষ্টা করছি।
তবে দ্রুততম সময়ে গ্রাহকদের কাছে ইন্টারনেট সেবা দিতে বিকল্প পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইএসপিএবি সভাপতি। তিনি নিহত ও আহত আইএসপি কর্মীদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে সবাইকে এই মানবিক সময়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সাময়িক ইন্টারনেট সমস্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে আগুন লাগে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে ১১ ইউনিট আগুন নেভাতে ও উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ছাড়াও সাত প্লাটুন আনসার মোতায়েন করা হয়য়
আর ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ওই ভবন থেকে তারা পাঁচজনকে উদ্ধার করেছে।