ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে যারা ব্যঙ্গ করেছিল, এখন তারাই নানা অপপ্রচারে এটার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সকাল ১০টার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’র প্রথম সভায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে পরিকল্পনা মন্ত্রী মোঃ আব্দুল মান্নান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী ও বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারসহ কমিটির ৩০ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবেরাও।
সভাপতির বক্তব্যে বিদ্রুপকারীদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবেলা করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নত দেশ থেকেও এগিয়ে। সরকার দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে কাজ করছে। তাই বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
আলোচনায় চার বছর বয়সী নাতির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, মোবাইল হাতে নিয়ে আমার চার বছরের নাতি আমাকে বলে, কোনো চিন্তা নাই, দাদু; টিপতে থাকো। টিপতে টিপতে হয়ে যাবে। এভাবে তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে নতুন প্রযুক্ত কাজে লাগিয়ে দক্ষতার উন্নয়ণ ঘটাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি প্রথম সামনে আসে ২০০৮ সালে। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ করার কথা বলা হয়। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গঠন করা। কিন্তু বিরোধীদলসহ অনেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে নানা ব্যঙ্গ করেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দেশকে ডিজিটাল করে। অথচ এ নিয়ে আমাদের ব্যঙ্গ করা হতো। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিল এখন তারাই নানা অপপ্রচারে এটির বেশি ব্যবহার করছে।
নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী কাজ করায় সবক্ষেত্রেই দেশের উন্নতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আর এই ইশতেহার পূরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে বলে প্রমাণ দিয়েছে বলেও মত দেন প্রধনমন্ত্রী।
বর্তমান সরকারের সময়ে নেওয়া বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের প্রতিটি টেলিফোন ছিল অ্যানালগ। আমরাই প্রথম উদ্যোগ নিয়ে ডিজিটাল টেলিফোন চালু করি। আর মোবাইল ফোন ঢাকা আর চট্টগ্রাম ছাড়া কোথাও চলতো না। একটা মাত্র কোম্পানি ছিল, মোবাইলে কল করলে ১০ টাকা প্রতি মিনিট, ধরলেও ১০ টাকা প্রতি মিনিট কেটে নিত। সেই জায়গা থেকে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল মানুষের হাতে হাতে মোবাইল পৌঁছে দেওয়া। আজকে কম খরচে কথা বলা, ইন্টারনেট চালাচ্ছে সবাই।
তিনি বলেন, আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশের মানুষ প্রযুক্তি খুব দ্রুত ধারণ করতে পারে। এখন সবাই মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার করা শিখেছে। আমরা চাই সবাই প্রযুক্তিগত দিকে দক্ষ হয়ে উঠুক। আমরা গ্রাম পর্যায়ে, স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার দিয়েছি।
এসময় ডিজিটাল পেমেন্টের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন বিল অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন এর সুফল ভোগ করছে জনগণ। আগের মতো আর সিরিয়াল দিয়ে কোথাও দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। আমরা মানুষকে প্রস্তুত করেছি উন্নত প্রযুক্তিতে যাওয়ার। অথচ একসময় এই ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছিল, ব্যঙ্গ করতো। আমরা তাদের কথায় কান দেইনি। এগিয়ে গেছি আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে। আজকে তারাই সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিচ্ছে।