আইএমএফের শর্ত পূরণ ও জনস্বার্থে কিংবা দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক কর এবং ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে, দেশীয় বৈদ্যুতিক এলইডি বাল্ব ও সুইস-সকেট, ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটর, বিলাসবহুল পণ্য এবং ই-কমার্সের ডেলিভারি চার্জ পণ্যের দাম কমতে পারে।
অপরদিকে দেশে মুঠোফোন উৎপাদনে বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাটের হার দুই থেকে আড়াই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে মুঠোফোনের দাম বাড়তে পারে। দাম বাড়বে মনিটরেরও। এছাড়াও ইলেকট্রনিক সিগারেট ও সমজাতীয় ইলেকট্রিক ভ্যাপোরাইজার ডিভাইসের যন্ত্রাংশের শুল্কহার বাড়িয়ে মূল পণ্যের সমান, ২১২ শতাংশ করার প্রস্তাব করায় ভ্যাপোরাইজারের দাম বাড়বে।
উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শীর্ষক বাজেট প্রস্তাবনায় কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পণ্য উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবনায় কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদনে রেয়াতি সুবিধা আরও ৩ বছর বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়াও অপটিক্যাল ফাইবারের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান এবং এ অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তবনা রয়েছে বাজেটে।
একইসঙ্গে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের প্রতিরক্ষার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সফটওয়্যার আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে দেশের সফটওয়্যার খাত কার্যত কোনো উপকার পাবে না বরং ২০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি হবে বলে মনে করছেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
তিনি বলেছেন, এবারের বাজেটে অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সিকিউরিটি সফটওয়ারের আমদানি শুল্ক ৫% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করা হয়েছে। এসব সফটওয়্যার/ টুলস দেশে তৈরি হয় না। অপারেটিং সিস্টেম ও সিকিউরিটি সফটওয়্যার সকল পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ডেটাবেজ এবং ডেভেলপমেন্ট টুলস ব্যবহার করে সকল ধরনের সফওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। তদুপরি, সফটওয়্যারের উৎপাদন ও কাস্টমাইজেশন পর্যায়ে ৫% মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই হারে শুল্ক এবং কর বৃদ্ধি পেলে সঙ্গতকারণেই দেশীয় সফটওয়্যার উৎপাদন সহ সকল পর্যায়ের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ব্যবহারকারীদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশীয় সফটওয়্যারের শিপ্লের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হবে।
অপরদিকে ই-কমার্স মার্কেট প্লেস-কে স্বীকৃতি দিয়ে এসআরও প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার। তিনি বলেছেন, এই অর্জন ই-ক্যাবের গত তিন চার বছরের চেষ্টা। তবে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি তিনি।
বাজেটে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীদের কোনো দাবিই প্রতিফলিত হয়নি বলে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার। তিনি জানিয়েছেন, মিনিটরের ওপর ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ কারায় বাজারে মনিটরের দাম বাড়বে। প্রযুক্তি পণ্যের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ইন্টারনেট সেবাদাতাদের আইটিইএস এর অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিষয়টি এবারও উপেক্ষিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেছেন, বাজেটে কোনো নতুন কিছুই পাইনি। ভ্যাট-ট্যাক্স কমানা হয়নি। দেশে ক্যাবল উৎপাদনে যে সুবিধা দিয়েছে কার্যত তা কোনো কাজে আসবে না।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে কানেকটিভিটি। সব পর্যায়ের মানুষের কানেকটিভিটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সিম কর হ্রাস হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে ভবিষ্যত বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ন্যূনতম কর হার কমিয়ে ১% অথবা প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা ধরছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে কর বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।
কর বাবদ যে রাজস্ব আসবে তার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এই বাজেট পাস হবে আগামী ২৬ জুন। কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।