রোববার (৯ এপ্রিল) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সভাকক্ষে পিইসি (পোস্ট ইনিউমারেশন চেক) জরিপের আলোকে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২- এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যা প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ওই অনুষ্ঠানেই জানানো হয়, চলমান জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এমন ব্যয় করে দেশের জনসংখ্যা কত, তা জানতে ১০ বছর অপেক্ষা করার পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। এসময় ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে এক বছরের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার তথ্য প্রচারের উপায় বের করতে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশ দেন তারা।
প্রথমেই যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের এই সময়ে এত বিপুল ব্যয় করে জনশুমারির বিপক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে শুমারির জন্য দশ বছর অপেক্ষা না করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিবছর শুমারি হালনাগাদ করার পক্ষে মত দেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “এটা আরও অনেক কম ব্যয়ে পরিচালনা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা আরও কম ব্যয়ে কীভাবে করা যায় এটা আমাদের বের করতে হবে।”
‘জনশুমারির পেছনে কেন দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করবো? এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “একটি জরিপের জন্য দশ বছর অপেক্ষা কেন। উন্নত বিশ্বের মত করে ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করে প্রতিবছর শুমারির আপডেট করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারির আপডেট করে।
“বিশেষ করে ফিনল্যান্ডে এটা প্রতিবছরই করে যাচ্ছে। এটা আমরা কীভাবে করব তা বের করতে হবে।”
একই সুরে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডসে এক বছরের মধ্যে জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও তা-ই হচ্ছে। আমাদের দেশেও এক বছরের মধ্যে জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন তিনি। ঘটা করে জনশুমারি করার ধারা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
গত বছরের ১৫-২১ জুন দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। শুমারি শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে ২৭ জুলাই প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে দেশের গণনাকৃত মোট জনসংখ্যার হিসাব দেয়া হয়।
পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী শুমারি সম্পন্নের পর গণনাকালে সৃষ্ট কভারেজ ও কনটেন্ট ইরর নিরূপণের জন্য বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) গত বছরের অক্টোবরে স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে শুমারি পরবর্তী যাচাই পিইসি জরিপ পরিচালনা করে।
সংবাদ সম্মেলনে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন শুমারিতে গণনাকৃত ও পিইসির মাধ্যমে সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করেন। ষষ্ঠ এই জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ, বা প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বয়স ২৯ বছরের কম। অর্থাৎ, তারুণ্যের কারণে জনসংখ্যার যে জনমিতিক সুবিধা, তা পুরোপুরি বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দেশে ২৯ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ। এরমধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এ বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ১০ শতাংশ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বিআইডিএসের ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সাংবাদিকরা।
জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। পিইসিতে (পোস্ট ইনিউমারেশন চেক) আরও ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জন যোগ হয়ে দেশের সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জনে।