প্রযুক্তি জগতে মেটাভার্সের ব্যবহার বাড়ছে। উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে এরই মধ্যে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু ল্যাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া এবার এক ভিন্ন নজির স্থাপন করল।
এই মাসে মেটাভার্সে তাদের প্রথম শুনানি পরিচালনা করলো দেশটির এক আদালত।
ট্রাফিক সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে কলম্বিয়ার ম্যাগডালেনার প্রশাসনিক আদালতে অনুষ্ঠিত দুই ঘণ্টার শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা ভার্চুয়াল কোর্টরুমে অ্যাভাটার হিসেবে হাজির হয়েছিল। এমনকি ম্যাজিস্ট্রেট মারিয়া কুইনোস ট্রায়ানার অ্যাভাটারের গায়ে ছিল বিচারকদের কালো পোশাক।
ডিজিটাল জায়গাকে তুলনামূলক প্রাণবন্ত করে তোলা অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন অ্যাভাটারের সাহায্যে উপস্থাপনের মাধ্যমে মেটাভার্স ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে সত্যিকারের আদালত শুনানি পরীক্ষা করা বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আবির্ভূত হলো কলম্বিয়া।
ভবিষ্যতেও আদালতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার করবে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
ওদিকে মেটাভার্স অভিজ্ঞতাকে ‘বিস্ময়কর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে শুক্রবার রয়টার্সকে আদালতের বিচারক কুইনোস বলেছেন- এটা ভিডিও কলের চেয়েও আসল বলে মনে হয়।
কুইনোস জানিয়েছেন, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা এক আঞ্চলিক পরিবহণ ইউনিয়নের এই মামলা এখন আংশিকভাবে এগিয়ে যাবে মেটাভার্সেই। এর মধ্যে থাকতে পারে রায়ও। একইসঙ্গে অন্যান্য জায়গায় মেটাভার্সভিত্তিক শুনানির সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি তিনি।
তবে ভার্চুয়াল ট্রাইব্যুনালের সাংবিধানিক বৈধতা পুনর্ব্যক্ত করলেও দর্শকদের ৭০ শতাংশই এতে সম্মত নয় এমন উল্লেখ করে পরীক্ষাটি জনপ্রিয় হয়নি বলে স্বীকার করেন কুইনোস।
তিনি বলেনে, এর খরচ ও প্রবেশগম্যতা নিয়ে কথা বলা দরকার। তবে, উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন নিপীড়ন সংশ্লিষ্ট মামলায় মেটাভার্সের পক্ষে সমর্থন দেন তিনি।
একইভাবে আইনি কার্যক্রমে মেটাভার্সের ব্যবহার বাস্তবায়নে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কলম্বিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ রোজারিও’র জননীতি বিষয়ক অধ্যাপক জুয়ান ডেভিড গুতেরেস। তিনি বলেছেন, অনেকসময় আমরা নিজেরাই এই ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করি যে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ তুলনামূলক দক্ষ উপায়ে করা যাবে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি পুরোপুরি বিপরীত।
এর আগে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আইনি বিচারগুলোতে জুম ও গুগলের ব্যবহার অনেক বেড়েছিল। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, অফিসের কাজগুলোও ভিডিও কনফারেন্সে চলে গিয়েছিল। মহামারি পরবর্তি সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বহু প্রতিষ্ঠান তাদের ‘হোম অফিস’ কার্যক্রমের সুযোগ বহাল রাখে। এরই মধ্যে গেলো ১৫ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার আদালত শুনানি ইউটিউবে স্ট্রিম করে। তবে, এতে কিছু সংখ্যক ‘মাথা ঘোরানো’ ক্যামেরা মুভমেন্ট ও বিকৃত নড়াচড়া বাদে তেমন সমস্যা না দেখা গেলেও, এটি বন্ধ হয়ে যায়।
তাই এবার এসব ত্রুটি ছাড়াই মেটাভার্স হয়ত সে স্থান দখল করতে যাচ্ছে। কোর্টের মতো স্পর্শকাতর স্থানে এর ব্যবহার বিষয়টিকে আরও সুদৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। যদিও অনেকেই এর অ্যাভাটারগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট নয়।