কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে মেধার সক্ষমতার প্রমাণ দিতেই সারা বিশ্ব থেকে আগমন ছিল এক ঝাঁক মেধাবীর। সংখ্যাটা শতাধিক নয় বরং হাজারো মেধাবীর উপস্থিতে এক মিলন মেলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা “আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা” আয়োজনে।
ঢাকার বসুন্ধরার আইসিসিবি-তে অনুষ্ঠিত হয় “ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি)” এর ৪৫ তম আসরের “আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা”।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং আইসিপিসি নির্বাহী পরিচালক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আলাউদ্দিন। এর আগে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ কনটেস্ট এর পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু। অনুষ্ঠান শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক কামরুল আহসান। এসময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ এবং বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ আছে। সারা বিশ্বে এখন আমাদের প্রায় ১২ মিলিয়ন লোক কর্মক্ষেত্রে শারীরিকভাবে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে এবং যেখানে কাজ করে সেই জাতির জন্য সম্পদ তৈরি করে। এর ফলে এটি আমাদের জন্য বিশ্বের সাথে একটি সংযোগ সেতু খুলে দিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী যদি কেউ দেশের বাইরে যায় তবে সেখান থেকে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করে আবার দেশে ফিরে এসে নিজ দেশের উন্নয়নে কাজে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি বলেন আমরা পরিবর্তন আনতে দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা জনগণের সুবিধার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ তহবিলও প্রদান করছি।
মন্ত্রী আরো বলেন যে, আমাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা ক্ষুধাকে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে বিশ্ব জাতির মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে যে আমরা অবশেষে এই দশকের শেষে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হতে সক্ষম হব। আমরা আশা করি যে, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আইসিটি বিভাগের সাথে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কাজ করা যা আগামী দিনের জন্য আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের হাতিয়ার হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দ্রুত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি লাভ করেছি। তিনি বলেন যে, মহামারী না হওয়া পর্যন্ত এক দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ১৩ বছরে মাথাপিছু আয় ৫০০ মার্কিন ডলার থেকে ২৮০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
পলক ডিজিটাল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্জনগুলো উক্ত অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অনলাইন সরকার, বাণিজ্য ও ব্যাংকিং পরিষেবা নিশ্চিত করতে এবং গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ সক্ষম করতে “ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশনে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে। পলক আরো বলেন যে স্টার্টআপ ও নতুন উদ্ভাবনী ধারণার জন্য বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ দেশ হয়ে উঠছে ফলে স্টার্টআপ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ মিলিয়ন চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে পাশাপাশি আইসিটি সেক্টর থেকে ৫ বিলয়ন ডলার রপ্তানি করার চেষ্টা চলমান। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সঙ্গে অংশীদারিত্বে শীঘ্রই ঢাকায় আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। পলক বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা ভোগ করছে। ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা প্রতি বছর ২০ হাজারেরও বেশি আইটি এবং আইটিইএস গ্র্যাজুয়েট পাচ্ছি। পরিশেষে তিনি বলেন, আমাদের জনশক্তি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের জন্য একটি অর্থনৈতিক শক্তি।
ড. মোহাম্মাদ আলাউদ্দিন তার বক্তৃতায় বলেন, আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল হল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠত্বের উদযাপন। এই বিশ্ব ফাইনাল প্রতিযোগিতা বিশ্ব জাতিকে উন্নীত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী করতে পারে তার একটি জীবন্ত উদাহরণ এবং উজ্জ্বল প্রকাশ হিসবে কাজ করবে। সবশেষে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে মানব শক্তি তৈরিতে অসামান্য ভুমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান।
আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. উইলিয়াম বি. পাউচার বলেন আইসিপিসি একটি জনপ্রিয় আয়োজনে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর সারাবিশ্ব থেকে অংশগ্রহণকারি অংশনেয় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ঢাকায় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার সফল ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রতিযোগিতার সময় লক্ষ করা যায় যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করলেই দলগুলোর পাশে বেলুনের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিটি দলের জন্য একটি কম্পিউটার এবং তিনজন করে প্রোগ্রামার রয়েছে। ফলাফল ঘোষণার সময়ও নাটকীয় মুহূর্তের অবতারণা করেন আইসিপিসির কর্মকর্তা ও বিচারকেরা।