ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ালো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ফ্ল্যাগশীপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি- স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, বিএফডিএস ও ভিসার সহযোগিতায় কো-ব্র্যান্ড কার্ড-সহ স্টার্টআপদের জন্য বিশেষ ঋণ (লোন) প্রোডাক্ট চালু করা হয়েছে। যৌথভাবে উন্মোচন করা হলো উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার বান্ধাব ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড। এই কার্ড ব্যবহার করে ৪ শতাংশ সুদে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তারা। এছাড়াও ক্রেডিট কার্ডে ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনে টাকাকে ডলার এবং ডলারকে টাকায় রূপান্তরের সুবিধা চালু করলো ব্যাংকটি।
বৃহস্পতিবার গুলশানে ইবিএল এর প্রধান কার্যালয়ে ই-বিএল ফ্রিল্যান্সার প্রোডাক্ট স্যুট হিসেবে ইবিএল-স্টার্টআপ বাংলাদেশ কো কার্ড হিসেবে ফ্রিডম ফ্রিল্যান্সার উন্মোচন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফা ওসমান তুরাণ এবং স্মার্টাআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ ও ইবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতখার এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইবিএল ব্যাংককে উদ্ভাবনী ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক ব্যাংকিং পর্ষদকে সফল বাস্তবায়নের পর ঋণ সুবিধা ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের জন্য স্টার্টআপ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া ‘ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট প্রোপোজাল’ গ্রহণের প্রস্তাব দেন।
লাইফ ক্যাসেলে জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন ২০০০ উদ্যোমী উদ্যোক্তা রয়ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ লাখ তরুণ কাজ করছে। প্রতি বছর এই খাতে ২০০ জন করে নতুন উদ্যোক্তা প্রবেশ করছে। স্টার্টআপগুলো এখন কর্মক্ষেত্র তৈরির ইঞ্জিনে পরিণ হচ্ছে।
এসময় চালডাল সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার আশরাফ, সেবাএক্সওয়াইজেড সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক সজীব, শেয়ার ট্রিপ সহ-প্রতিষ্ঠাতা কাশেফ রহমান, ঢাকা কাস্ট সহ প্রতিষ্ঠাতা ফাহরিন হান্নান এর মতো তরুণ উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভলপমেন্ট সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. তানজীবা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত উদ্যোক্তাসহ এ পর্যন্ত ৫০টি উদ্যোগে গত দুই বছরে ৫০ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। এই বিনিয়োগ আগামী বছর নাগাদ ১০০ কোটিতে উন্নীত হবে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালে জ্ঞান নির্ভর স্মার্ট ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশে কাজ করছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প সফল ভাবে বাস্তবায়নের পর আমরা এখন ২০২৫ সালের মধ্যে আইটি ও আইটিইএস খাতে নতুন ৩০ লাখ কর্মসংস্থান, ৫ বিলিয়ন রপ্তানি আয় করতে চাই। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সাররা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে। এজন্য তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা ওসমান তুরাণ বলেন, স্টার্টআপগুলো সমাজে চেঞ্জ-মেকার এবং প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। একটি কর্মচঞ্চল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরীর স্বার্থে সরকারি এবং বেসরকারী খাতের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রোগ্রামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পার্টনারশীপ গঠনের জন্য আমি আইসিটি ডিভিশন এবং ইবিএলকে অভিনন্দন জানাই।”
ইবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলী রেজা ইফতেখার তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘ইবিএল ইনোভেশন এবং টেকনোলজিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। তাই যারা বা যেসকল সংস্থা বাংলাদেশের ডিজিটাল রুপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে সহযোগিতাকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত স্টার্টআপ বাংলাদেশ দেশের প্রথম এবং একমাত্র ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল। দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরিতে স্টার্টআপ বাংলাদেশ যে ভূমিকা পালন করছে তা অনুপ্রেরণাদায়ক। এই অবকাঠামোকে ভিত্তি করেই দেশে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের বিকাশ ঘটবে। বলার অপেক্ষা রাখে না এই যাত্রায় সঙ্গী হতে পেরে ইবিএল গর্বিত”।
স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, স্টার্টআপ ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল সুযোগ রয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য এবং একটি টেকসই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধও যাতে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের পরবর্তী স্টার্টআপ হাব হিসাবে স্থান করে নিতে পারে। এখানেই আমরা ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের লক্ষ্যের সাথে এক, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে স্টার্টআপের গ্রোথ এর জন্য এই কো-ব্র্যান্ডেড ব্যাংকিং পণ্যগুলো চালু করার মাধ্যমে তরুণ স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের সুবিধা প্রদান করা।
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের স্টার্টআপদের জন্য যে ঋণ প্রোডাক্টটি উদ্বোধন করা হয়েছে তার নাম ‘স্টার্টআপ এক্সপ্লোরার’। বাংলাদেশের স্টার্টআপদের জন্য এই প্রোডাক্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসির অংশ হিসেবে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত এই ঋণ পেতে পারে স্টার্টআপরা। এটি স্টার্টআপগুলোকে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধিতে অনেক উপায়ে উপকৃত করবে।