ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইনে ব্যক্তিগত আড্ডার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। চা স্টলের দায়বদ্ধতাহীন আলোচনার মতই সোস্যাল মিডিয়ায় যার যা খুশি তাই লিখে। রেজিস্ট্রিকৃত নিউজ পোর্টাল বা সংবাদ পত্রের দায়বদ্ধতা আছে। সেখানে সম্পাদক আছেন –নিউজ এডিটর, চীফ রিপোর্টার আছেন। তারা সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধ দেখে থাকেন। নিবন্ধনহীন অনলাইন পোর্টাল বা আইপি টিভিও একইভাবে আচরণ করে থাকে। দায়িত্বশীল গণমাধ্যম ও তার সাংবাদিকদের নিয়ে আমার উদ্বেগ নেই-কিন্তু নাম-ঠিকানা গোত্রহীন গণ মাধ্যমের নামের প্রকাশনাগুলো আমাদের আতঙ্ক।
তিনি সাংবাদিকদের ডিজিটাল গণমাধ্যম ও ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মন্ত্রী আজ রবিবার ঢাকায় পিআইবি মিলনায়তনে পিআইবি আয়োজিত টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড, বাংলাদেশ ( টিএমজিবি) সদসদের জন্য মোবাইল সাংবাদিকতা বিষয়ক তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি শুরুতেই বলেন যে মোবাইল সাংবাদিকতা বস্তুত অনলাইন সাংবাদিকতা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের ফলে আগামীদিনের সাংবাদিকতা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে বলেন, কাগজে ছাপা পত্রিকা প্রযুক্তির পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বিলীন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সময়ের প্রশ্ন। রেডিও টিভিরও একই যাত্রাপথ।
মন্ত্রী বলেন, অনলাইন মিডিয়ার বিকাশের ফলে সাংবাদিকতার বর্তমান রূপ পরিবর্তন নতুন পৃথিবীর জন্য সূচনা মাত্র। ডিজিটাল প্রযুক্তি সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিকতা আগামী দুনিয়ায় এমন একটি জায়গায় নিয়ে যাবে যা এখন কল্পনাও করা যায় না বলে উল্লেখ করেন দেশের প্রথম ডিজিটাল বাংলা সংবাদ সংস্থা আবাস সম্পাদক মোস্তাফা জব্বার।
কম্পিউটারে বাংলা ভাষার এই জনক বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ধারাবাহিকতায় আগামী দিনের দুনিয়ায় কম্পিউটারে কী বোর্ডের প্রয়োজন হবে না। কথা বললে সেটা শুদ্ধ ভাবে টাইপ হবে, বাংলা থেকে ইংরেজী, ইংরেজী থেকে বাংলায় শুদ্ধ অনুবাদ হবে ডিজিটাল যন্ত্রে।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রযুক্তিগত ও বিবর্তনের ইতিহাস রচনার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামীতে ডাটার ব্যবহার হবে গিগাবাইটে নয় টেরাবাইটে। বিবর্তনের ফলে যা কিছুই ঘটুক সাংবাদিকতায় অতীতের ধারাবাহিকতা বাদ দেয়াও যাবে না উল্লেখ করে অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক এই নেতা বলেন, অতীতকে বাদ দিয়ে আধুনিক সাংবাদিকতা করা যায় না। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাাধ্যমে অশ্লিলতা ও গুজব প্রতিরোধে গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা তুলে ধরে বলেন, আমরা ২৬ হাজার পর্ন সাইট এবং ২ হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। প্রতিদিন এই কাজ করছি। গুজব প্রতিরোধেও কার্যকর বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সাংবাদিকতার দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, স্বাধীনতার পর সাংবাদিকতার বিকাশ হয়েছে, মিডিয়া বেড়েছে কিন্তু সে তুলনায় সাংবাদিক তৈরি করতে পারিনি আমরা। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে পিআইবি অধ্যাদেশ জারি করে দেশে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।
সভা প্রধানের বক্তব্যে পিআইবি’র মহাপরিচালক আরো বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে মোবাইল সাংবাদিকতার গুরুত্ব বেড়েছে। গুজব প্রতিরোধে সাংবাদিকদের ভূমিকা সম্পর্কেও আলোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, সাংবাদিকতার ধরন পরিবর্তন হওয়ায় সাংবাদিকদের দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সেজন্য পিআইবি সাংবাদিকদের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পিআইবি’র উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসেন, সহকারী প্রশিক্ষক ও এবারের কোর্সের সমন্বয়ক নাসিমূল আহসান। প্রশিক্ষণে টিএমজিবির ৩০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীর হাতে সনদ তুলে দেন মন্ত্রী।