ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প সফলতার রহস্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব। আর এই অংশীদাত্বের সফলতায় গত ১৩ বছরে আইসিটি পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বেসিস। তাই বেসিস এর সংশ্লিষ্টতায় ২০৪১ সালের উদ্ভাবনী বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে এই পরিবারের উন্নয়নে ৫টি অগ্রাধাকারকে সনাক্ত করেছে আইসিটি বিভাগ।
রবিবার আইসিটি বিভাগের সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পঁচটি বিষয় নিয়ে সবিস্তারে আলোকপাত করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এসময় আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর নব নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন প্রতিমন্ত্রী। সভা শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পলক জানান, এবার ইন্ডাস্ট্রি-গভর্নমেন্ট এবং একাডেমিয়ার সম্মিলিত উদ্যোগে দক্ষ মানসম্পদ উন্নয়নে ব্লেন্ডেড লার্নিং চালু করবে আইসিটি বিভাগ। এজন্য আইসিটি বিভাগের মহাপরিচালক রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে আহ্বায়ক করে বেসিস এবং আইসিটি বিভাগ মিলে ইস্যু ভিত্তিক বেশ কয়েকটি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেসিস পরিচালক আবু দাউদ খানকে মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও আইসিটি শিল্পের বিকাশে ২০২৪ সাল থেকে আইসিটি খাতের কর্পোরেট ট্যাক্স মুক্ত সুবিধা আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করতে অর্থমন্ত্রমন্ত্রীর কাছে যৌথভাবে আবেদন করার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ এই যে ৫টি এরিয়া আমি আইডিন্টিফাই করেছি, আশা করি এই ৫টি এরিয়াতে আমরা আইসিটি বিভাগ এবং বেসিস – লোকাল, ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে একটা কোলাবরেটিভ ইফোর্টে কাজ করবো। দিস ইজ দ্য ওয়ার্ল্ড অব কোলাবরেশন। দিস ইজ নট টু কমপিট উইথ ইচ আদার, রাদার টু কোলাবরেট টু ইচ আদার।”
এসময় কেবল ভারত, জাপান বা কোরিয়ার মতো দেশ থেকে ঋণ গ্রহণ নয় বাংলাদেশও বিশ্বের বিভন্ন প্রান্তে বিনিয়োগ করবে বৈঠবে এমন সিদ্ধন্ত নেয়ার কথাও জানান পলক। তিনি বলেন, “আমরা এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিবো, লাইন অব ক্রেডিট বাংলাদেশ ইন্ট্রুডিউস করবে আরো অন্যান্য সাউথ এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার মতো দেশে। যেখানে আমরা ১০০ মিলিয়ন ডলার লাইন অব ক্রেডিট ইন্ট্রুডিউস করবো; সেখানে আমরা লিমিটেড টেন্ডারের সুযোগ দেবো বেসিস কোম্পানির মধ্যে। যাতে ব্যাংকিং সফটওয়্যার, বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস তারা ইন্ট্রুডিউস করতে পারে।”
কথায় কথায় প্রযুক্তি শিল্প বিকাশে সরকারের নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন জুনাইদ আহমেদ পলক। বলেছেন, “হিউম্যান রিসোর্স হলো, বিজনেস ফ্রেন্ডলি পলিসি হলো, টেকনলোজি হলো, ইনোভেশন হলো। তখন থাকলো ইনভেস্টমেন্ট। জামানত বিহীন লোন একসময় স্বপ্ন ছিলো। প্যান্ডামিকে আমরা ৪ শতাংশ সুদে এমন কোটি কোটি টাকার ঋণ দিয়েছি। এরওপর স্টার্টআপদের জন্য ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট চালু করেছি। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের সাহস দিতে ঝুঁকি নিচ্ছে সরকার। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিডেট কোম্পানি নামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি ডিজরাপ্টেড কোম্পানি গঠন করে দিয়েছেন।এর বাইরে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ২৩৬টি কোম্পানি এই অনুদান পেয়েছে। আরো হাজার স্টার্টআপে আমরা বিনিয়োগ করতে চাই। ”
বেসিস সিনিয়র সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম।
বক্তব্যে কোনো দাবি নিয়ে নয়; এবারের ‘আইসিটি বর্ষ পণ্য’সফল করতে অংশীদারিত্বের মধ্যে কাজ করতে বেসিস সদস্যদের ক্ষুধার্ত থাকার কথা জানান বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
তিনি বলেন, “আজকের মিটিংয়েও আমরা কোনো দাবি দাওয়া নিয়ে আসি নাই। আমাদের এটা লাগবে। ওটা লাগবে। আমরা একটা দাবি দাওয়ার কথাও বলি নাই। আমরা জানি আমরা যদি রোডম্যাপের অংশ হতে পারি তাহলে আমরা এই জিনিসগুলো আমরা এমনিতেই পাবে। তাই আজ আমরা কার্যক্রম ভিত্তিক আলোচনা করেছি। এই সময়েই প্রতিমন্ত্রী আমাদের মধ্যে একটি ব্রিজ করে দিয়েছেন। আমরা একটা পরিবার হয়ে এই দেশটাকে ডেলিভার করতে চাই।”
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য বৈঠকে বেশ কিছু ডিজরাপটেড সল্যুশন এবং কীভাবে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি সে বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে বলেও জানিয়েছেন বেসিস সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক খায়রুল আমিন, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিত কুমার, সিসিএ নিয়ন্ত্রক আবু সাঈদ চৌধুরী, এইচ প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ মেহেদী মাসুদ, এটুআই প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মাদ হুমায়ূন, , সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান, সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ, পরিচালক আহমেদুল ইসলাম বাবু, মুশফিকুর রহমান, তানভীর হোসেন খান, মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল ও রাশাদ কবির প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নতুন কমিটিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও সচিব।