কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুবিধায় চুতর্থ শিল্পবিপ্লবে চ্যালেঞ্জের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনার হাতছানি দেখছে সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আইসিটি উপদেষ্ট সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রবেশের জন্য ২০১৭ সালেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, অবকাঠামো গড়ে তোলার পর এবং দক্ষ মানবসম্পদের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় করা গবেষণা বলছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধাক্কায় আগামী ১০ বছরে ৫৫ লাখ কর্মসংস্থানের অবলুপ্তি ঘটলেও নতুন করে হবে এক কোটি কর্মসংস্থান।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভবনা ও চ্যালেঞ্জের ওপর দেয়া দুই পর্বের উপস্থাপনায় এসব আশাবাদের কথাই তুলে ধরেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন লিভারের্জিং ইন আইসিটি পলিসি অ্যাডভাইজার সামি আহমেদ।
বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের আয়োজেনে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী অনলাইন এই সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন লিভারেজিং আইসিটি ফর এমপ্লয়মেন্ট এন্ড গ্রোথ অফ দ্য আইটি-আইটি ইএস ইন্ডাস্ট্রি প্রকল্পের পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ।
আইসিটি বিভাগের নিজস্ব ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ‘বৈঠক’-এ অংশীজনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে উপস্থাপিত মূলপ্রবন্ধে সামি আজমেদ জানন, স্বস্তা শ্রমিকের সুবিধার পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম। কিন্তু সাম্প্রিতিক সময়ে কয়েকটি কারখানায় রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। সেখানে মাত্র ৭ সেকেন্ড পুরো একটি টি শার্ট বানায় ‘স্যুবটস’। রোবটের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযুক্ত করায় এটা সম্ভব হয়েছে। আর এটাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূল চ্যালেঞ্জ।
এ কারণে পোশাক শিল্পকারখানা মালিকদের এ বিষয়ে এখইন দূরদৃষ্টি দিয়ে কর্মীদের রোবট পরিচালনা থেকে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি দক্ষতা অর্জনে এগিয়ে আশার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই তরুণ প্রযুক্তি গবেষক।
তবে এতে হতাশার কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরইমধ্যে ৬০ মেগা থেকে ২০জিবি গতির ইন্টারনেটের ফেসবুকের ৪জি এলটিই বেলুন, স্পেস এক্স, ওয়ান ওয়েব, অ্যামাজন ও ওথ্রিবির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বিশ্বের নিয়ে এসেছে সংযুক্তির নতুন সম্ভাবনা। ফলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং থ্রিডি পিন্টিং-এ নিয়ে এসছে দারুণ সম্ভবানা। কাজে স্বচ্ছতা নিয়ে আসছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ন্যানোটেক, বায়োটেক, কেয়ান্টার কম্পিউটিং, ব্লু রেভ্যুলেশন এসব ক্ষেত্র আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কেননা, আমদের রয়েছে তরুণ জনশক্তি। তাদেরকে প্রস্তুত করতে পারলে আমরাই এগিয়ে থাকবো বিশ্বে।
উপস্থাপনায় যুক্তি তুলে ধরে সামি জানান, অটোমেশন বাড়ানো মানেই প্রবৃদ্ধি নয়। ভোক্তা চাহিদাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু মিলিয়ে অটোমেশনের বিকল্প নেই। এর সুফল আমরা এরই মধ্যে পেতে শুরু করেছি। দেশে এখন কেবল সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ আর গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকেই রপ্তানি আয় হয়েছে। প্রযুক্তির অন্তত ১৯টি ক্যাটাগরিতে কাজ করছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের আইটি কোম্পানিগুলো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সামি আহমেদ আরো জানান, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ৫০টি ফোর-আইআর পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একইসাথে নতুন আরো ৫০টি পেশাকে বিকশিত করতে পাঠ্যসূচিকে এর উপযোগী করতে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সফটস্কিল উন্নয়নের।
এক প্রশ্নের উত্তরে সামি বলেন, আমরা এরইমধ্যে সেন্টার ফর ফোর আইআর স্থাপন করছি। একইসঙ্গে নিজস্ব উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে আগামী বছরে ১০০টি প্রযুক্তি উদ্যোক্তাকে সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়াতেও বড় আকারে নেয়া হবে নানা উদ্যোগ। সর্বোপরি উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সুবিধা কাজে লাগাতে দেয়া হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। সব মিলিয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ কৌশল পত্র’ বাস্তবায়নে একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেই লক্ষ্যে পৌঁছবে বাংলাদেশ।
অপর এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, সব বিষয়ে নয়; আমরা কোন কোন বিষয়ে কাজ করলে লিপফর্গ করতে পারি সে বিষয়টিও এখন খতিয়ে দেখছি আমরা।