বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। প্রকৌশল জ্ঞান দিয়ে দেশ বিনির্মাণে আমৃত্যু হেঁটেছেন জাতির পিতার পথে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কারিগরি দীক্ষা নিয়ে মিতালি গড়েছেন গ্রাম-শহরের পথে। দাতাসংস্থার নজর কেড়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংস্থান করেছেন প্রয়োজনীয় অর্থের। দেশীয় প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন করেছেন নিজেদের সমাধান।
তবে আজ তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অপরিচিত। ইন্টারনেটের কল্যাণে অবশ্য কামরুল ইসলাম সিদ্দিক সম্পর্কে জানছেন নেটিজেনরা। সীমিত পরিসরে তাঁকে স্মরণ করা হলেও পরিচিত মহলে তিনি ‘কালপুরুষ’।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, গ্রামের উন্নয়ন না হলে যেমন বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে না এই কথাটি বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এই বিশ্বাসটিকে কাজে লাগানোর জন্য কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের মতো মানুষেরা কাজ করেছেন। কামরুল ইসলাম সিদ্দিক এলজিইডি প্রতিষ্ঠানটিকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থানে নিয়ে গেছেন।
এলজিইড ‘র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ খান বলেছেন, এলজিইডিকে আজকে যে পর্যায়ে দেখছেন, সে পর্যায়ে উনি যে স্বপ্নের বীজ বুনে গেছলেন তারই একটি রূপ। আমি বলি না যে বিশাল একটি গাছ হয়ে গেছে এখনো, তবে একটি ফলবান বৃক্ষ হয়েছে এলজিইডি এখন।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে শুধু এলজিইডি প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, এলজিইডিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জাতীয় উন্নয়নের ঢাল হিসেবে। কোনো প্রকল্পে বিদেশি বিনোয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি প্রকল্পের সার্বক্ষণিক তদারকি করতেন তিনি।
তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ।
প্রজ্ঞা আর কর্মে তিনি প্রশংসা পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকেও। এমনকি স্বৈর শাসক এরশাদও মুগ্ধ ছিলেন তার কর্মে।
স্মৃতি হাতড়ে এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল হাসান বলেছেন, তিনি যখন লালমাটিয়ার এলজিইবি-তে প্রথম ম্যাকিন্টস কম্পিউটার নিয়ে আসেন তখন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ সেটি দেখতে একজন সেনা কর্মকর্তাকে পাঠান এবং তার অফিসেও তা স্থাপনের পরামর্শ দেন।
দূরদর্শী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক যেন কালের গর্ভে হারিয়ে না যান সেজন্য বর্তমান তরুণ সমাজের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি রয়েছে সব মহলেই।
নগরবিদ ইকবাল হাবিব বলেছেন, আমি শুধু গ্রামীণ অবকাঠামো, গ্রাম-বাংলার উন্নয়নের জন্য উনি রূপকার ছিলেন এভাবে দেখি না। আমি দেখি দেশকে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া এবং সকলের অন্তর্ভুক্তিতায় একটি বসবাসযোগ্য সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে যে কজনার রূপকার হিসেবে নাম দেয়া যায় প্রকৌশলীদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য।
এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলী আলিউজ্জামান বাপ্পিও মনে করেন এখন সময় এসেছে তাকে রাষ্ট্রিয় সম্মাননা দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপনের।
বহুমুখী গুণের অধিকারি প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক এর জন্ম ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলায়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে শুরু করেন কর্মজীবন। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জীবন গড়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে হাতে তুলে নেন অস্ত্র। নয় মাস মুক্তি সংগ্রামে বিজয়ের পর নতুন করে শুরু করেন দেশ গড়ার সংগ্রাম। আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন সেই সংগ্রামেই। দেশকে দিয়েছেন উজাড় করে। এখন আমাদের পালা তাঁকে যোগ্য সম্মাননা দেয়ার।