ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, অনলাইন ভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) প্রদান করা যাবে। ভূমি কর প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত দেশের ৩ কোটি ৬০ লক্ষ জনগণ এ সেবার মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবেন। মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত হয়রানি কমবে ও ভূমি অফিসের দুর্নীতি বন্ধ হবে।
বুধবার ‘হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনলাইন ভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার পাইলটিং (১ম পর্যায়) কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এসব কথা বলেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভূমি সংস্কার বোর্ড এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
ভূমিমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, “গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রয়াসে ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনয়ন করা হয়েছে। তাঁর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের দূরদর্শী উদ্যোগের ফসল হিসাবে ভূমি মন্ত্রণালয় মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনাইটেড ন্যশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে”।
তিনি বলেন, “‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহৎ সংখ্যক ভূমিসেবা গ্রহীতাদেরকে স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প সময়ে ও হয়রানি মুক্তভাবে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আবহমান কাল থেকে প্রচলিত বিধি-বিধানের আলোকে চালু-কৃত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় পদ্ধতি ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে”।
মৌজা রেট সম্পর্কিত উপস্থিত জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী বলেন, এ সংক্রান্ত ব্যাপার মূলত আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। আমররা আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরব। আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন আগামী বছর, ২০২১ সালের জুলাই মাস নাগাদ দেশব্যাপী অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ় আশাবাদী।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ভূমি সচিব মোঃ মাক্ছুদুর রহমান পাটওয়ারী জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি রাজস্ব আদায়ের পাইলটিং কার্যক্রম চালানোর জন্য নির্বাচিত ভূমি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকবৃন্দ সহ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে ভূমিমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
উল্লেখ্য, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটয়্যার ব্যবহার করে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলার বৈধতা দিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় আজ একটি পরিপত্র জারি করে। সূত্রমতে, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার সহ মামলা সম্পর্কিত তিনটি সফটওয়্যারের পাইলটিং এর জন্য প্রথম পর্যায়ে ৮টি জেলার ৯টি উপজেলাধীন ০৯টি পৌর/ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অন্তর্গত ১৯টি মৌজা নির্বাচন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৫টি পৌর ভূমি অফিসের অন্তর্গত ১৩টি মৌজা হচ্ছে – চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও দক্ষিণ মতলব উপজেলার অন্তর্গত মিরপুর, গুদারারচর, নোয়াগাঁও, রুদ্রগাঁও, ভাটিরগাঁও, চরহোগলা, মোবারকদি ও ১৭৬নং ঢাকিরগাঁও মৌজা, মানিকগঞ্জ সদরের বনগ্রাম চক ও গঙ্গাধর পট্টি মৌজা, কিশোরগঞ্জ সদরের করমূলী ও মারিয়া মৌজা এবং জামালপুর সদরের সাতপাকিয়া মৌজা।
৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অন্তর্গত ৬টি মৌজা হচ্ছে – গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া উপজেলাধীন পাটগাতি ইউনিয়নের অন্তর্গত টুঙ্গীপাড়া মৌজা, ঢাকার সাভার উপজেলাধীন বাগধনিয়া ইউনিয়নের মজিদপুর ও আনন্দপুর মৌজা, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাধীন খাসখামা ইউনিয়নের হাইলধর ও মালঘর মৌজা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর ইউনিয়নের ‘দেওভোগ ‘ম’ খন্ড’ মৌজা।