বাংলাদেশের তিনটি উপকূলীয় জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ৬টি স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সংযুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্টেম এন্ড আইসিটি স্কিলস ফর গার্লস অফ কোস্টাল এরিয়া প্রকল্প। এরই ধারাবাহিকতায় মেয়েদের প্রযুক্তিভিত্তক দক্ষতা অর্জনে অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে ৩ অক্টোবর খুলনার কমরেড রতনসেন কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুলের ৪২ জন অভিভাবক ও শিক্ষকমন্ডলীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল শিক্ষক-অভিভাবক সমাবেশ।
উপকূলীয় এলাকায় মেয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতা একটা বড় সমস্যা। বাল্যবিবাহ, পারিবারিক অসচ্ছলতা কিংবা সামাজিক ট্যাবুর মত বিষয়গুলো এখনো মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে ব্যহত করছে। প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষতার যে বিস্তৃত সম্ভাবনা সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীসহ তাদের পরিবারও অবগত নন। মেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকে সহজতর করার লক্ষ্যে অভিভাবকসহ স্কুলের শিক্ষকমন্ডলীদের উপস্থিতিতে এই সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সভা আয়োজন করা হয়। আয়োজনটির সভাপতিত্ব করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক লক্ষণ কুমার সাহা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তিনটি উপকূলীয় উপজেলা খুলনার রূপসা, বাগেরহাটের রামপাল এবং সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মোট ৬টি মাধ্যমিক স্কুল- শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় তালা, শহীদ কামেল মডেল হাইস্কুল তালা, কমরেড রতনসেন কলেজিয়েট গার্লস হাই স্কুল রূপসা, নৈহাটী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় রূপসা, পেড়িখালী মডেল হাইস্কুল রামপাল, বড়কাটালি বহুমূখী হাইস্কুল রামপাল এর ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, গণিত, প্রোগ্রামিং ও রোবটিক্স এর উপর দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে প্রকল্পটি। প্রকল্পের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুলগুলোর শিক্ষকদের অংশপগ্রহণেও আয়োজন করা হয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রযুক্তিচর্চায় বিজ্ঞান, রোবটিক্স, প্রোগ্রামিং এবং গণিতের ল্যাব উপকরণ প্রদান করা হয় এই ৬টি স্কুলে। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে নিজেদের অনুশীলনের জন্য ট্যাব এবং একটি করে কম্পিউটারসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট হাতে কলমে করার উপকরণ, রোবটিক্সের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি এবং গণিতের মজার সব কৌশল শেখার উপকরণ প্রদান করা হয় স্কুলগুলোতে। স্কুলে প্রদত্ত ল্যাব ব্যবহার করেই শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে প্রকল্পের অভিজ্ঞ মেন্টরগণ। বাংলাদেশ জুনিয়র সাইন্স অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক স্কুল ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৬ জন শিক্ষার্থী জাতীয় পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় এসে অংশগ্রহণ করে প্রথমবারের মত কোন অলিম্পিয়াডের অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
প্রকল্প কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে স্কুলগুলোতে লাইব্রেরী তৈরী করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে বিজ্ঞান, গণিত, প্রোগ্রামিং, রোবটিক্স এর বিভিন্ন বই ছাড়াও সায়েন্স ফিকশন, এডভেঞ্চার উপন্যাস, কিশোর সমগ্র ইত্যাদি বই প্রদান করা হয় যা শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ার আগ্রহ তৈরী করবে।
এছাড়াও প্রযুক্তি ব্যবহারে অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা প্রদান করতে আগস্ট মাসে প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হয় সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেমিনার। সেমিনারে শিক্ষার্থীদের সাথে অনলাইন ঝুঁকি এড়াতে এবং সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেন খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা উপজেলার পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাগণ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে উৎসাহিত করতে আয়োজন করা হয় অনুপ্রেরণামূলক সেশন যেখানে একজন নারী টেক ব্যাক্তিত্ব তাঁড় নিজের অভিজ্ঞতা এবং ক্যারিয়ারের গল্প ভাগ করে নেন শিক্ষার্থীদের সাথে।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা মালালা ফান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)।