স্থপতি, ক্রীড়া সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের হোসেন আর নেই; তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
রোববার দিনগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি ও পরিবেশকর্মী এবং এসোকনসাল্ট লিমিটেডের এই প্রধান স্থপতি।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার মাল্টিপল অর্গান ফেইলিওর হয়েছিল। প্রথমে চোখের সমস্যা নিয়ে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর বেসরকারি স্পেশালাইজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে তার হার্টের আগের সমস্যা আবারও দেখা দেয়। দুদিন আগে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। এর আগে তাকে প্রথমে আইসিইউ এবং পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি এসোকনসাল্ট লিমিটেডের প্রধান স্থপতি। বর্তমানে কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অফ আর্কিটেক্টস এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল, এশিয়ার (আর্কেশিয়া) প্রেসিডেন্টও ছিলেন। নাগরিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন।
স্থপতি হিসেবে মোবাশ্বের হোসেনের নির্মাণকাজের মধ্যে প্রশিকা ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক ভবন ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন উল্লেখযোগ্য।
মোবাশ্বের হোসেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে তিনি সরাসরি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, ছিলেন ক্র্যাক প্লাটুনের সক্রিয় সদস্য।
এছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক মোবাশ্বের হোসেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক।
পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনে সোচ্চার এই স্থপতি ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহ-সভাপতি ছিলেন।
এদিকে মোবাশ্বের হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, নিকটাত্মীয়, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানান।
অপরদিকে ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটি ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান শোকবার্তায় বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের টেকসেই উন্নয়ন ও ঢাকা শহরের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে বাস্তব সম্মত চিন্তা করতেন।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মোবাশ্বের হোসেনের মরদেহ নেওয়া হচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে নেয়া হবে। জোহরের নামাজের পর তার জানাজা সম্পন্ন হবে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তার দেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে দান করা হবে।