সেবার ডিজিটাল রূপান্তর এবং দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইড অন্যতম ‘শক্তি’ হিসেবে কাজ করছে। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘উদ্ভাবন’ ছাড়া এর সুফল মিলবে না। তাই টেকসই প্রযুক্তির লক্ষ্যে বাজার উপযোগিতা এবং ভাষাবান্ধব সল্যুশনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে এটুআই। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই শুরু হলো ওমেন ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড সিএসএসএমই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২২। এই চ্যালেঞ্জে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে নারী-পুরুষে বিদ্যমান ২০ শতাংশ বৈষম্য কমাতে টেকসই ফিনটেক সল্যুশন খুঁজে বের করা হবে। সেরা টেক-সমাধানকারী পাবেন কোটি টাকার মতো গ্র্যান্ট। তবে এই গ্র্যান্ট পেতে কয়েক ধাপে মাইলস্টোন অতিক্রম করতে হবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীকে।
জাতিসংঘের ক্ষুদ্র মূলধন বিনিয়োগ সংস্থা ইউএনসিএফ এবং মাইক্রোসেফ কনসাল্টিংয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রথম বারের মতো আয়োজন করা হলো এই ফিনটেক ইনোভেশন ফান্ড। এই ফিনল্যাব বিডি বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট প্রোগ্রাম।
ভিডিও কনফারেন্সিং প্লাটফর্ম ‘জুম’-এ সংযুক্ত হয়ে বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর অনলাইনে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নিয়াজ মোহাম্মাদ জিয়াউল আলম। প্রতিযোগিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন অ্যাপ্লিকেশন উইন্ডো। এখান থেকে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত নিজেদের উদ্ভাবনের ধারণা পত্র জমা দিতে পারবেন আগ্রহীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিযোগীদের আইডিটিপি-কে অনুসরণ করে স্যলুশন তৈরির আহ্বান জানান জৈষ্ঠ্য সচিব।
তিনি বলেন, এই সময়ে আর্থিকখাতসহ অন্যান্য ডিজিটাল খাতে নারীদের অংশগ্রহণ আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। এক্ষেত্রে ইউডিসি এর একটি বড় অর্জন। শি-পাওয়ার প্রকল্পে প্রশিক্ষণ পেয়েছে ১০ হাজার ৫০০ নারী উদ্যোক্তা। এখন হার পাওয়ার প্রকল্পে ২৫ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আমার জানামতে, ইউএনডিপি ২০০ নারী উদ্যোক্তাকে স্মার্টফোন দিয়েছে। পাশাপাশি ২ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
‘এভাবেই ভাষা,বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে ডিজিটাল শক্তি ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। আর বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনে নারী উদ্যোক্তাদের খুব বেশি রিলায়েবল। তাই নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিতিতে নিয়ে আসতে আজকের ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’-যোগ করেন সরকারের সেরা উদ্ভাবক (পিএএ) পুরস্কৃত এই কর্মকর্তা।
এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেটলাইফ বাংলাদেশের সিইও আলা উদ্দিন আহমেদ এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডাগেটস ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার স্নিগ্ধা আলী।
এটুআই প্রোগ্রাম ম্যানেজার তহুরুল হাসান টুটুলের সম্পাদনায় অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন এটুআই ইনোভেশন ফান্ড প্রধান নাঈম আশরাফী।
সভাপতির বক্তব্যে ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন বলেন, আমি আশা করি, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পিছিয়ে থারা নারীদের আর্থিক খাতে অন্তর্ভূক্তিকরণের টেকসই উপায় বাতলে দেবেন। বাস্তবতার নিরিখে এটি একটি অনন্য পরিবেশ তৈরি করবে।
এজন্য উদ্ভাবনগুলো টেকসইকরণ; মার্কেট এবং পলিসি লিংকেজের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপর করেন তিনি।
নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত সেনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন আমাদের কুইক উইন সল্যুশনে না গিয়ে কমন ফ্রেমের বাইরে কাজ করতে হবে। প্রথাগত সমাধানের বাইরে ভাবতে হবে। এজন্য বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সাম্যের পথে হাটতে হবে। তৃণমূলের মানুষের দোরগোড়ায় সাশ্রয়ে সেবা পৌঁছে দিতে অতিক্ষুদ্র শিল্পকে অনবোর্ড করার দিকে হাঁটছে সরকার।
টেকসই উদ্ভাবনী স্যলুশন দেয়ার ক্ষেত্রে বৃটিশ সাংবাদিক মাইকেল প্যালি ও মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য জন এম রিসার্চন জুনিয়রের পথ অনুসরণের পরামর্শ দেন ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন।
মেটলাইফ বাংলাদেশের সিইও আলা আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে মেটলাইফ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। মেটলাইফ ফাউন্ডেশন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অগ্রগতিকে তরান্বিত্ব করা এবং মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ প্রচেষ্টায় এটুআই এর ফিনল্যাববিডি যুক্ত হওয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার স্নিগ্ধা আলী বলেন, পিছিয়ে পড়া নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ফিনল্যাব বিডি। নারী উদ্যোক্তাদের সৃজনশীলতা এবং সক্ষমতা উন্নয়নে উদ্ভাবনী সমাধানের খোঁজে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজনের মতো সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসায় এটুআই, এমএসসি এবং ইউএনসিডিএফ কে ধন্যবাদ জানাই।