দেশে ক্যাশলেস ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে আজ রোববার প্রাথমিক অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ৫২টি আবেদন থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই তালিকা নিয়েই রাজধানীর মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সভায় দুই থেকে পাঁচটি ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দিয়ে তাদের বরাবর চিঠি ইস্যু করতে পারে। সূত্রমতে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞ জনবল নেই এমন আবেদনও সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই চিঠিতে ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে তাদের অবকাঠামোগত বিষয় চূড়ান্ত করতে সময় বেধে দেয়া হবে। তাবে চূড়ান্ত ভাবে যে প্রতিষ্ঠানগুলো বিলের আলোকে হয়নি, সেগুলো বাদ দেয়া হয়েছে।
সময়সীমা ১৬ দিন বাড়ানোর পরে গত ১৭ আগস্ট শেষ হয় ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদনের সময়সীমা। এরমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার, ফুড ডেলিভারি এবং রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সহ বিভিন্ন খাত থেকে মোট ৫০০টি কোম্পানির ব্যক্তি বা জোট থেকে ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। কোনো কোনো আবেদনে ১০টি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সুতরাং এটা বলা যায়, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে চেষ্টা করছে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, লেনদেন আরও সহজ করতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দশটি ব্যাংক মিলে গঠিত হচ্ছে একটি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’। ব্যাংকগুলো হলো- দ্যা সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড। অর্থাৎ এই দশটি ব্যাংক হলো ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রস্তাবিত ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসিতে ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের পরিচালনা পর্ষদ।
এর আগে আবেদন করা প্রস্তাবিত ‘বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক’-এর সঙ্গে বর্তমান উদ্যোক্তা ব্র্যাক ব্যাংকের পাশাপাশি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানি ইন মোশন এলএলসি, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট গ্রুপ ও সফটব্যাংক ভিশন ফান্ড। ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের জন্যও আবেদন করেছে নগদের বর্তমান ও অন্য কিছু উদ্যোক্তা।
এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী মিলে জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের আবেদন করেছে। আবেদন জমা দিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক ও তাদের মূল কোম্পানি ভিওন।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে একটি জোট আবেদন করেছে। নাম ঠিক করা হয়েছে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনা। সঙ্গে রয়েছে ইউসিবির উদ্যোক্তাদের কোম্পানি আরামিট, যারা মূলত ঢেউ শিট উৎপাদন করে। জোটে আরও আছে ইউসিবির উদ্যোক্তাদের কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস। জেনেক্স ইনফোসিস হলো এনআরবিসির কয়েকজন উদ্যোক্তার কোম্পানি।
একইভাবে ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক করার আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ‘পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক’ নামে একটি ব্যাংক স্থাপনের আবেদন করেছে।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। তবে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। এর নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপ-নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। একটি ডিজিটাল ব্যাংকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে। তবে লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় ও মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে।