মোবাইল গেম “ফ্রি ফায়ার” গেমসের আইডি ও পাসওয়ার্ড ফেরত চাওয়া নিয়ে বিরোধে প্রতিবেশী বন্ধুর (১৩) হাতে খুন হয় শিবগঞ্জ উপজেলার স্কুলছাত্র মো. সিফাত (১৩)।”
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মনিপুরীপাড়া এলাকা থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতারে পর বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
তিনি জানিয়েছেন, সিফাত এবং হত্যাকারী দুজন বন্ধু ছিল। তারা মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেম খেলত। ঘটনার কয়েক দিন আগে হত্যায় জড়িত কিশোর কৌশলে নিহত সিফাতের গেমের আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয়। পরে সিফাত ও তার কয়েক বন্ধু তাকে চাপ দিলে পাসওয়ার্ড ফেরত দেয়। এ ঘটনায় ওই কিশোর মনে ক্ষোভ ছিল। এরপর সোমবার বিকালে সিফাত তার বোনের মোবাইল মেরামত করার জন্য বের হলে ওই কিশোরের সঙ্গে দেখা হয়। তখন সে সিফাতকে তার দাদার বাড়ি নিশ্চিন্তপুর গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। পরে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে বেড়াতে গিয়ে বাঁশবাগানে গল্পের ফাঁকে সুযোগ বুঝে চাপাতি দিয়ে গলায় আঘাত করে। সিফাত মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় সিফাতের মুখ চেপে ধরে জবাই করে এবং বাম হাতের কবজির রগ কেটে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সেখান থেকে সে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
মোবাইল গেম ফ্রি ফায়ার। এতে প্রতিপক্ষকে “কিল” অর্থাৎ ঘায়েল করে ছিনিয়ে আনতে হয় জয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই গেমসে আসক্তি দেখা গেছে দেশের কিশোর-তরুণদের মাঝে। এ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। সম্প্রতি এই গেমস নিয়েই দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার স্কুলছাত্র মো. সিফাত (১৩)।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সিফাতের বন্ধু অপ্রাপ্ত বয়স্ক। যে কারণে তার নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে সে বগুড়া শহরের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় আরও তদন্ত চলছে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার সিফাতের বাবার নাম শাহ্ আলম। বগুড়া শহরের নিশিন্দারা খাঁপাড়া এলাকায় তাদের বসবাস। সিফাত এ বছর শহরের একটি স্কুল থেকে সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দেয়।
পুলিশের ভাষ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে সিফাত তার বোনের নষ্ট মোবাইল ফোন মেরামতের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। পথে প্রতিবেশী ওই বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। অভিযুক্ত সিফাতকে কৌশলে দাদার বাড়ি শিবগঞ্জের নিশ্চিন্তপুরে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। সে-ও তাতে সায় দেয়। সেখানে একটি বাঁশঝাঁড়ে বসে আড্ডা দিতে শুরু করে দুই কিশোর। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিফাত বাড়ি যেতে চাইলে অভিযুক্ত কিশোর সঙ্গে থাকা চাপাতি দিয়ে গলায় আঘাত করে। আঘাতে সিফাত মাটিতে পড়ে যায়। তখন অভিযুক্ত মুখ চেপে ধরে গলা ও বাঁ হাতের রগ কেটে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সিফাতের মৃত্যু হয়।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, “শিশু আদালত শুনানি শেষে অভিযুক্ত কিশোরকে যশোরের পুলেরহাটে শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা শাহ্ আলম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন।