জেট রোবোটিকস অ্যাপস’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করে দুবাইয়ে বসে তা দিয়ে চলত চক্রের পুরো যোগাযোগ কর্মকাণ্ড। আর সেই যোগাযোগব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে চক্রটি মুঠোফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস)র মাধ্যমে গত তিন মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা হুন্ডি (অবৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন) করেছে বলে দাবি করেছে সিআইডি।
সিআইডি জানিয়েছে, এ অ্যাপের অ্যাডমিন কুমিল্লার শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। তিনি ২০২০ সাল থেকে দুবাইতে আছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বসে নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠানোর দায়িত্ব নিতেন তিনি। গত তিন থেকে সাড়ে ৩ মাসে তিনি ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছেন জেট রোবোটিক অ্যাপের মাধ্যমে।
তবে তিনি ঠিকই চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে টাকা পাঠিয়েছেন। এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে চট্টগ্রামের মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসকে। প্রতিষ্ঠানটির ৪৮টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সিমে আগে থেকেই সমপরিমাণ বা বেশি অনলাইনে টাকা সংগ্রহ করে রাখা হয়। এরপর সংগ্রহ করা টাকা এজেন্ট সিম থেকে অ্যাপের ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে অর্থ পাঠিয়ে দিয়ে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্রটি।
বুধবার রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে এই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে হুন্ডির কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন,সিমকার্ড ল্যাপটপ ও ২৮ লাখ ৫১ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার সিআইডির সদর দপ্তরের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, লিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রায় এক মাস ধরে অনুসন্ধান করে এই চক্রের সন্ধান পায়। এই চক্রের কারণে রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল দেশ। অনেকের অবৈধ উপার্জনের টাকা এই চক্রের মাধ্যমে বৈধ হচ্ছে। এই চক্র দুই ভাগে হুন্ডির কাজ পরিচালনা করে। দুবাইয়ে থাকা চক্রের সদস্যরা প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। আর দেশে থাকা চক্রের সদস্যরা ওই প্রবাসীর দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এতে প্রবাসীদের মাধ্যমে যে রেমিট্যান্স আসত, সেটা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের কালোটাকার মালিকেরা এই চক্রের মাধ্যমে তাঁদের অবৈধ উপার্জন বৈধ করছেন। আর এই পুরো কাজটি পরিচালিত হতো জেট রোবোটিকস অ্যাপের মাধ্যমে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান আরও বলেন, চক্রের সঙ্গে এমএফএস কোম্পানির চট্টগ্রামের তাসনিমা অ্যাসোসিয়েট নামের একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের লোকজন জড়িত। তাদের কাছ থেকে কম লেনদেন হয় এমন এমএফএস এজেন্ট অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করতেন চক্রের সদস্যরা। বিনিময়ে ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের লোকজন হুন্ডির লাভের টাকার একটি ভাগ পেতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, আমরা আরও পাঁচ-সাতটি প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জানতে পেরেছি, যারা দুবাই থেকে একই ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে হুন্ডি চালাচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম রোধে সিআইডিসহ সব দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। এটার দায়িত্ব ডিবি, র্যা ব এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও। তিনি বলেন, ওই মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সিম ব্যবহার করে বেআইনি কার্যক্রম হলে তা দেখার দায়িত্বও তাদের। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির টেরিটরি অফিসার ও ফিল্ড অফিসার সবাই মামলার আসামি হবেন।