বাংলাদেশে আইএইএম ও আইআইটি’র মতো ইনস্টিটিউশন দরকার ইন্টারনেটের সুশাসন ও প্রযুক্তি উন্নয়ন নীয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন ভারতীয় অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক শ্রীনিবাস চেন্ডি। বর্তমানে APNIC-এর পলিসি ও কমিউনিটি উন্নয়নের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য লিয়া জোঁ অফিসার। পাশাপাশি এপিনিক সচিবালয়ে অভ্যন্তরীন নীতি প্রণয়ন ও বিশ্লেষণে নেতৃত্ব দেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় এসেছিলে বিআইজিএফ সম্মেলনে। সম্মেলন শেষে ডিজিবাংলা-কে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে, বাংলাদেশী সিইও পেতে হলে দেশেই আইএইএম ও আইআইটি’র মতো ভালো ইনস্টিটিউশন প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
ইন্টারনেট বা ওয়েব দুনিয়ায় ইংরেজি ভাষার একাধিপত্য। প্রযুক্তির সব কিছু হচ্ছে ইংরেজিকে প্রাধান্য দিয়ে। তাহলে কি প্রযুক্তি ভাষা বৈষম্য ঘটাচ্ছে?
না, কারণ ইংরেজি হল আমেরিকার প্রাথমিক ভাষা, যেখানে ইন্টারনেট প্রথম বিকশিত হয়েছিল। যদিও, ICANN ইন্টারনেটকে বহুভাষীকরণ করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় ভাষায় ডোমেইন নাম এবং মেইল ঠিকানা উভয়ই তৈরি করা যেতে পারে। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তি মাধ্যম বা ইন্টারনেটে ইংরেজির ব্যবহার কমছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্বজুড়েই রাষ্ট্রযন্ত্র প্রযুক্তির ওপর আধিপত্য বিস্তার করছে। ইন্টারনেটের অপব্যবহার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠোপেষকতায়, তাহলে ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম কী করছে?
বিষয়টি অনেকটাই রাজনৈতিক। কেননা, সরকার দুষ্টু লোকদের থেকে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে ডেটা ব্যবহার করে। তাই যদি না আপনি ইন্টারনেটে অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত না হন, তাহলে আমার মনে হয়, আপনার এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। অনেক অ্যাপ আছে, যখন আমরা এটি খুলি তারা মোবাইল নম্বর, ইমেল এবং আরও অনেক কিছু চায়, এবং এটি হ্যাচিংয়ের মতো আমাদের জন্য হুমকি হতে পারে, আপনি এটিতে কী বলবেন? আজকাল, বেশিরভাগ অ্যাপ ব্যবহার করা নিরাপদ কারণ সেগুলি গুগল অ্যাপের মতো অ্যাপ প্রদানকারীর দ্বারা যাচাই করা হয়েছে। যদিও, এখনও কিছু অ্যাপ আছে যা ক্ষতিকারক হতে পারে। এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে; আপনি অন্য কোনো অ্যাপ অনুসন্ধান করতে পারেন বা আপনার ডেটা ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া বন্ধ করতে পারেন।
সার্ক দেশগুলির আইপিভি ৬ প্রয়োগের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী?
বিশ্বজুড়েই প্রয়োগ হচ্ছে। কিছু দেশে দ্রুত হচ্ছে। তবে দক্ষিণ এশয়ায় গতিটা বেশ ধীর। আগামীতে আর আইপিভি ৪ থাকছে না। তাই আইএসপি বা সরকার যদি দেশজুড়ে আইপিভি ৬ বাস্তবায়ন না করে, আমার মনে হয়, তাহলে স্মার্ট সিটি বা ডিজিটাল সিটি যাই বলি না কেন বস্তাবায়ন সম্ভব হবে না। স্মার্ট জাতি গঠনে সরকারকে অবশ্যই আইপিভি ৬ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বে ভারত এগিয়ে আছে। সবাই প্রয়োগ করলে সহজেই স্মার্ট জাতি গড়ে তুলবে।
কেন অন্যদেশগুলো দ্রুত প্রয়োগে পিছিয়ে আছে?
এর প্রধান কারণ- হাই স্কিল এবং ইনভেস্টন্ট। হাই স্কিলের জন্য দরকার ট্রেনিং, স্কিল্ড স্টাফ। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ জন্য আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। আইপিভি ৪ থেকে ৬ এ রূপান্তরে প্রয়োজন বিশেষ ধরনের রাউটার ও সুইচ এবং লিগেসি সিস্টেমকে পরিবর্তন করা। সময় সাপেক্ষ বিষয় হলেও বিষয়টি নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশই আইপিভি ৬ ছাড়া স্মার্ট জাতি হতে পারবে না। ভারত থেকে অনেক সিইও আসছেন কিন্তু আমরা সারা বিশ্বের আইটি কোম্পানিগুলির জন্য আমাদের দেশ থেকে যথেষ্ট সিইও তৈরি করতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের পেছনে কেন?
ভারতে আইআইএম, আইআইটির মতো অনেক ভালো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তরুণদের সিইও হতে সক্ষম করে তুলছে। তাই এই ধরণের ইনস্টিটিউশন তোমাদের দরকার।
আমার মনে হয়, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত প্রযুক্তি জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। যথেষ্ট ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাক্রমের প্রয়োজন। হয়তো তোমার দেশ এ জন্য পর্যপ্ত সুযোগ দিচ্ছে না। তাই, তুমি যদি যথেষ্ট স্মার্ট হয়ে থাকো এবং তোমার নিজের আগ্রহ থাকে তাহলে তোমাকে অন্য কোথাও থেকে তা অর্জন করতে হবে। আসলে সরকার তোমোকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিলেও তা পূর্ণ হবে না যদি না তুমি নিজে থেকেই এর প্রয়োজন অনুভব না করো।
তবে, তুমি আশা করতে পারো না, সবাই সিইও হবে। কেউ কেউ হবে। এজন্য ভালো মানের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে। অবশ্য ভারত থেকে সিইও হয়েছেন তারা দেশ থেকে বেসিক শিক্ষা নিয়ে বাইরে থেকে মাস্টার্স এর মতো উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছে।
বেঙ্গালুরু ভারতের একটি স্মার্ট সিটি এবং স্টার্ট আপের জন্য পরিচিত। ঢাকা বা বাংলাদেশে সরকারের কী কী নীতি নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
স্টার্ট জাতি গড়ে তুলতে সরকারকে সবার আগে একটি পলিসি তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলার পাশাপশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অফিস বাংলাদেশেই স্থাপন করতে হবে। যেমনটা গড়ে উঠেছে ভারতে হায়দারাবাদে। যেমনটা, আমি এসেছি সাইবারাবাদ থেকে। যেখানে রয়েছে মাইক্রোসট ও গুগল’র মতো ক্যাম্পাস। এর সবগুলোই করেছে ফেডারেল ও স্টেট গভর্নমেন্ট সম্মিলিত ভাবে। আমি মনে করি এভাবে বাংলাদেশ সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে অবশ্যই আইআইটির মতো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে হবে। কেননা ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বহুজাতিক আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভারতে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।