দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর নির্বাচনে পরিচালক পদে লড়ছেন কনটেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেডের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এস এম রফিক উল্লাহ। প্যানেল ‘স্মার্ট টিম’ এর হয়ে সাধারণ ক্যাটাগরিতে পরিচালক পদে লড়ছেন তিনি। নির্বাচিত হলে দেশের আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রির সঠিক ব্রান্ডিং করতে চান। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বিপণন, মেন্টরশিপ তৈরি ও আইসিটি খাতে দেশীয় বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান গড়তে রাখতে চান মূখ্য ভূমিকা। স্মার্ট ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে বেসিসকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যও রয়েছে তার।
কনটেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেডের (র্যাবিটহোল) প্রধান নির্বাহী এ এস এম রফিক উল্লাহ প্যানেল ‘টিম স্মার্ট’ থেকে জেনারেল ক্যাটাগরিতে পরিচালক পদে লড়ছেন। অ্যাডভান্সড ইআরপি বিডি লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে গড়া এই প্যানেলে রয়েছেন এক ঝাঁক তরুণ প্রার্থী। এ এস এম রফিক উল্লাহও তাদের একজন। এ ছাড়া তিনি অনলাইন গণমাধ্যম সারাবাংলা ডটনেটের ব্যবস্থাপনা সম্পাদকও।
এ এস এম রফিক উল্লাহ বলেন, দেশের আইসিটি কোম্পানিগুলো অনেক ভালো ভালো কাজ করছে। আমাদের আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রির সক্ষমতা রয়েছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানকেও টেক্কা দেওয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে আমাদের। দেশের আইসিটি খাতে বড় বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। দেশের আরও বেশি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান তৈরিতে আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নলেজ শেয়ারিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নির্বাচিত হলে দেশে বড় বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চাই।
তিনি বলেন, দেশের আইসিটি খাতের রফতানি আয়ের ডাটা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। সঠিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে আমরা সেই বিভ্রান্ত দূর করার উদ্যোগ নেবো। কর অব্যাহতি বহাল রাখতে আইসিটি খাতের সব উদ্যোক্তাকে সঙ্গে নিয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার উদ্যোগ নেবো, সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই খাতের প্রাণের দাবিকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার চেষ্টা করবো। তিনি আরও বলেন, দেশের আইসিটি খাতকে মিডয়াতে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে নানামূখী উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রির নানামূখী ব্রান্ডিং করবো। খাতটির সক্ষমতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজে লাগিয়ে দেশের আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রির সঠিক ব্রান্ডিং করতে চাই। সঠিক ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে বেসিসকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য আমার।
এ এস এম রফিক উল্লাহর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান র্যাবিটহোল একাধিবার বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। দুইবার এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্সের (অ্যাপিকটা) অংশ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি এবং সবশেষ ২০২৩ সালে একমাত্র দেশীয় কোম্পানি হিসাবে স্পেশাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। বেসিসের প্রথম সদস্য হিসেবে র্যাবিটহোল গ্লোবাল মার্কেটিং ফোরামের সিএমও অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল অ্যাড প্লেসমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সেই অ্যাড সার্ভার থেকে ৪০ হাজার ঘন্টা লাইভ স্ট্রিমে অ্যাড সার্ভ করার অনন্য রেকর্ড অর্জন করে র্যাবিটহোল। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের পার্টনার হিসাবে গিনেজ বুকেও নাম উঠিয়েছে কনটেন্ট ম্যাটার্স।
বেসিস এ নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে রফিক উল্লাহ বলেন, ২০১৭ এর শেষের দিকের কথা বলছি, তখন অনেক সময়ই একটা কথা প্রায়ই শুনতাম যে, আমাদের দেশে ভাল কাজ হয় না। আমাদের প্রোগ্রামাররা ভাল না। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন। গ্রামীণফোনে কাজ করার সময় বিদেশী অনেক ভেন্ডর বাদ দিয়ে আমরা লোকাল অনেক সলিউশান প্রোভাইডারের সাথে কাজ করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রথম সারীর কোম্পানিকেও হারিয়ে দিয়ে আমাদের দেশের কোম্পানি কাজ পেয়েছে এবং ভাল ডেলিভারি করেছে। পরবর্তীতে নিজেইতো আমরা কন্টেন্ট ম্যাটারসে র্যাবিটহোল তৈরী করেছি যা সারা পৃথিবীতে মানুষের জন্য লাইভ খেলা ব্রডকাস্ট করে আসছে মোবাইল এবং ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। তাহলে এই যে, “আমাদের দেশে হয় না” বা “করতে পারছে না” এই পার্সেপশান পালটানো একটা মোর অফ মার্কেটিং এন্ড ব্র্যান্ডিং এক্সারসাইজ। মার্কেটিং করে মানুষের মনোভাব পালটানো। বিটুবি, বিটুসি – সবার ধারণাই পাল্টানো। ইন্ডাস্ট্রির প্রপার ব্র্যান্ডিং করা।
এ এস এম রফিক উল্লাহ বলেন, যখন বেসিসে খুবই সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করি, ২০১৭ এর শেষের দিকের কথা বলছি, তখন অনেক সময়ই একটা কথা প্রায়ই শুনতাম, আমাদের দেশে ভাল কাজ হয় না। আমাদের প্রোগ্রামাররা ভাল নন। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভিন্ন। গ্রামীণফোনে কাজ করার সময় বিদেশি অনেক ভেন্ডরকে বাদ দিয়ে আমরা লোকাল অনেক সলিউশান প্রোভাইডারদের সঙ্গে কাজ করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রথম সারির কোম্পানিকেও হারিয়ে দিয়ে আমাদের দেশের কোম্পানি কাজ পেয়েছে ও ভাল ডেলিভারি করেছে। পরবর্তীতে নিজেইতো আমরা কন্টেন্ট ম্যাটারসে র্যাবিটহোল তৈরি করেছি, যা সারা পৃথিবীতে মানুষের জন্য লাইভ খেলা ব্রডকাস্ট করে আসছে মোবাইল এবং ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। তাহলে এই যে, ‘আমাদের দেশে হয় না’ বা ‘করতে পারছে না’ এই পার্সেপশান পালটানো একটা মোর অফ মার্কেটিং অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং এক্সারসাইজ। মার্কেটিং করে মানুষের মনোভাব পাল্টানো যায়। ইন্ড্রাস্ট্রির সঠিক ব্রান্ডিং করা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যারা ডিজিটাল মার্কেটিং করেন, তারাও আসলে অনেক ক্ষেত্রেই ডিজিটালের মাধ্যমে ট্র্যাডিশনাল কাপড় চোপর, ফ্যাশন আইটেম বা বিউটি আইটেম এইসব বিক্রি করেন। ডিজিটাল প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস বিক্রি বা টেকনলোজি প্রোডাক্ট ব্রান্ডিং এবং মার্কেটিং করার ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। কাজেই অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয়েছে, আমি ব্র্যান্ড মার্কেটিয়ার হিসাবে হয়ত একটু অন্যভাবে ভাবতে পারি। আর আমার কাজের পরিধি এখন পর্যন্ত জীবনে টেকনোলজি ব্র্যান্ড এবং মার্কেটিং নিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত। আমি মনে করি, ব্র্যান্ডিং কাজটি আমি ভাল পারি এবং বেসিস মেম্বারদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ব্র্যান্ড সাবজেক্ট ম্যাটারদের আমি একজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেসিস সদস্যদের জন্য কিছু করার আত্মবিশ্বাস, খাতটির উন্নয়ন ও দেশের জন্য কাজ করার আগ্রহ থেকেই নির্বাচন করছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও কাজ করার সুযোগ পেলে আইসিটি খাতের জন্য কিছু করতে চাই।’
রফিক উল্লাহ বলেন, ‘বেসিসকে মিডিয়ার টপে থাকতে হবে। বেসিসকে সব সময় প্রাসঙ্গিক হতে হবে। এই কাজটির জন্য ইন্ডাস্ট্রির মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং প্রিসিশান মার্কেটিং ছাড়া কোন উপায়ই নেই। আমার মনে হয়, এই একটি জায়গা বেসিসকে বদলে দিতে পারে। অন্যদের সবার কাজকে সহজ করে দিতে পারে। যেই জায়গায় আমি অভিজ্ঞতা ও নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে বেসিসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতেই পারব বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
ছাত্রবস্থায় এ এস এম রফিক উল্লাহ ভোরের কাগজে জুনিয়র সাব এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশনে যোগ দেন। টেলিকম খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনে দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করেছেন। এরপর তার যাত্রা শুরু হয় দেশের আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে। গ্রামীণফোন থেকে বের হয়ে শুরু করেন কনটেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেড। এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানই র্যাবিটহোল, যা ক্রিকেট ও ফুটবলের লাইভ স্ট্রিমিং দেখানোয় জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
রফিক উল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে জড়িত ছিলেন। আইবিএ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন, আইবিএ এলামনাই ক্লাব, ওল্ড ল্যাবরেটরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডস এলায়েন্স, ডুফা ক্লাব, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম ও ডিবেটিং সোসাইটির মতো অনেক সংগঠনে জড়িয়ে আছেন তিনি। বেসিসেও তার সম্পৃক্ততা প্রায় এক দশক ধরে।