মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক তেল সমৃদ্ধ কাতার। গ্রীষ্মকালীন তীব্র উত্তাপের কারণে ফিফা’র ২২তম আসরটি ২০ নভেম্বর হতে চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারের ৫টি শহরের ৮টি মাঠে। দর্শকদের স্বস্তি দিতে গ্যালারিতে ইন্টেলিজেন্ট কুলিং প্রযুক্তি, স্মার্ট ওয়াই-ফাই ও চার্জিং স্টেশন, রিয়েল-টাইম ন্যাভিগেশন, রোবট রেফারি ও সেমি অটোমেটিক অফসাইড টেকনোলজির মতো অসাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে ফুটবলের এই মহা আসরে।
কালার-চেঞ্জিং লাইট এর পাশাপাশি অনেক ধরনের লাইট ইফেক্ট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে কাতার বিশ্বকাপে Al Bayt ও Luasil স্টেডিয়ামে ওপেনিং ও ক্লোজিং অনুষ্ঠানের জন্য। এসব লাইট এনার্জি-এফিসিয়েন্ট, নন-টক্সিক ও সাধারণ লাইটের চেয়ে ৬গুণ অধিক সময় ধরে কাজ করে। গরমের অশান্তি থেকে মুক্তি দিতে শীততাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি থাকছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত এলপাম উইন্ড টারবাইন। এই টারবাইন উষ্ণ বাতাস এবং সূর্যশক্তিকে সমন্বয় করবে। এই যন্ত্রটির কাজ হচ্ছে সমর্থকদের ছায়া প্রদান করা এবং ইউএসবি চার্জিং ডক হিসেবে কাজ করা। এমনকি এটি তথ্য বহন করার জন্য স্পিকার, ওয়াইফাই, শীতলীকরণ, নজরদারি ক্যামেরা এবং লাইটের কাজ দেবে।
মাঠে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে উন্নত করা হয়েছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) নামক প্রযুক্তিটি। নতুন করে সংযোজিত, আধা-স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তির মাধ্যমে জটিল সিদ্ধান্তগুলো আগের যে কোনোবারের চেয়ে নিখুঁত এবং দ্রুততার সঙ্গে দেয়া সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন ফিফার টেকনোলজি অ্যান্ড ইনভেশন ডিরেক্টর জোহানেস হলজমুলার। দোহায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একই কথা বলেছেন ফিফার সংশ্লিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান, সাবেক এলিট রেফারি পিয়ারলুইজি কালিনা। তিনি জানিয়েছেন, প্রযুক্তিযুক্ত বল ‘আল রিহলা’র ভেতরের সেন্সর ছাড়াও প্রতিটি স্টেডিয়ামের চারপাশে থাকবে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা। ক্যামেরাগুলো প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ২৯টি পয়েন্টকে নির্দেশ করে পরিচালিত হবে। শুধু তাই নয়, আল রিহলা নামে যে বল ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্বকাপে, সেটাতেই ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চতর প্রযুক্তি। যে কারণে বলটাই খেলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বোচ্চভাবে নিশ্চিত করবে। অফসাইড অবস্থান করা ফুটবলার বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ামাত্রই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিকে অফসাইড সতর্কবার্তা প্রদান করবে। মাঠে দেখা মিলবে রোবট লাইন্সম্যান।
প্রযুক্তির টেক-সই ব্যাবহারের মাধ্যমে খেলার জন্য অপসারণযোগ্য স্টেডিয়াম তৈরি করেছে কাতার। বিশেষ করে স্টেডিয়াম-৯৭৪ ঠিক খেলনার মতো করেই পুনরায় খুলে ফেলা যাবে। শিপিং কনটেইনার এবং ইস্পাত ফ্রেম থেকে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটি কাতারের জন্য আইকনিক। এছাড়াও থ্রি-ডি রেন্ডারিং সিস্টেমের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে স্টেডিয়ামে অবস্থিত জায়ান্ট স্ক্রিন এবং ঘরে বসে টিভিতে দর্শকরা ত্রি-মাত্রিক ভিডিও দেখতে পারবে।
খেলোয়াড় ও মাঠের বাইরেও থাকছে প্রযুক্তি সমারহ। বিশ্বকাপ চলাকালীন চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পরিধানযোগ্য বেশি কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সিরিজ। স্নাগ-ফিটিং শার্টের কাপড়ে সরাসরি কম বিদ্যুতের সেন্সর মুদ্রণ কার হয়েছে। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে শার্ট পরিধানকারীর হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হাইড্রেশন মাপা যাবে। এই শার্টগুলোতে ব্লুটুথেরও ব্যবস্থা থাকছে, যা সরাসরি বেস স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এ ধরনের প্রযুক্তির পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের পরিধানযোগ্য স্মার্ট ইলেকট্রনিকস নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে যা কাতার বিশ্বকাপে ফ্যানরা ব্যবহারের সুযোগ পেতে পারেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য খেলা উপভোগের ব্যবস্থা করতে আনা হয়েছে হাতে পরিধানযোগ্য ফিলিক্স পাম। এটি হাতের তালুতে প্যাটার্নযুক্ত তথ্য প্রেরণের মাধ্যমে হ্যাপটিক বা এক ধরনের স্পর্শের অনুভূতি তৈরি করবে দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের। ফলে পুরোপুরি খেলায় মগ্ন হতে পারবেন তারাও।
বিশ্বকাপের খেলা দেখতে আসা পর্যটকের জন্য থাকছে নাভবাডি অ্যাপ। এটি কাতারে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য প্রদান করবে। স্টেডিয়ামগুলোর অবস্থানসহ হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ, যানবাহন ইত্যাদির খোঁজ পাওয়াও যাবে অ্যাপে। এই অ্যাপের আওতায় থাকছে প্রতিটি ভেন্যুতে যাওয়ার জন্য বৈদ্যুতিক বাস চলাচলের সময়সূচি।