২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উল্কা গেমস। ২০১৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানে বড় অংকের বিনিয়োগ করে ভারতের মুনফ্রগ ল্যাবস। সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকায় এই দুই প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি অধিগ্রহণ করেছে সুইডেন ভিত্তিক মোবাইল গেমস প্রতিষ্ঠান স্টিল ফ্রন্ট গ্রুপ। এই ঘটনায় মোবাইল গেম ও অ্যাপ ডেভলপমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বকে জানান দিয়েছে বলে মনে করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
আর তাই দেশে বাড়তে থাকা এই মোবাইল গেমের বাজারে নিজেদের ন্যায্য অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে গড়ে ওঠা শতাধিক গেমিং কোম্পানি এবং এর নির্মাতাদের দৃঢ় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
মঙ্গলবার উল্কা গেমস ও টু আওয়ারস জব আয়োজিত ডিজিটাল ক্যারিয়ার কনক্লিভ ২০২১ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।
বৈশ্বিক মোবাইল বাজারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের মোবাইল গেমের বাজার এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।
বক্তব্যে পলক আরো বলেন, মোবাইল অ্যাপস অ্যান্ড গেমিং প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ হাজার অ্যাপ ও গেম ডেভেলপার তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৪১টি মোবাইল অ্যাপ টেস্টিং অ্যান্ড গেমিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গেইম তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশজুড়ে বিস্তৃত ৮ হাজার ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রতি মাাসে ১৫০০ ধরনের সেবা পাচ্ছে এক কোটি মানুষ। আর ২০৪১ সাল নাগাদ উদ্ধাবনী শক্তিতে বলীয়ান একটি জাতি ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশ জুড়ে স্থাপন করা হচ্ছে জয় ডিজিটাল সার্ভিস এমপ্লয়মেন্ট সেন্টার। এই সেন্টারগুলো থেকে আইটি ফ্রিল্যান্সারদের অন্টারপ্রেনিউর বানানো এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে তাদেরকে সফল করার জন্য চেষ্টা করছে আইসিটি বিভাগ।
অনুষ্ঠানে এলআইসিটি নীতি উপদেষ্টা সামি আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার এ বাঙালী তরুণেরা প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে, এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও, আমি গেমিং সেক্টরে ফোকাস করতে চাই। এই সেক্টরে আমাদের আয় ও অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মিলিয়ন ডলারের এই বাজারে যুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের এই খাতে দক্ষ কর্মী নির্মান এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
সোলাইমান সুখনের ভ্রাম্যমান উপস্থাপনায় টু-আওয়ারস জব প্রতিষ্ঠাতা সানজিদা খন্দকার, উল্কাগেম প্রতিষ্ঠাতা জামিলুর রশীদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ কপিরাইট এ্যান্ড আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, বাংলাদেশ অরগানাইজেশন ফর লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রেসিডেন্ট কাজী মাহমুদ আহমেদ, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদের মধ্যে বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ বলেন, “এই আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। ডিজিটাল ক্যারিয়ারের ধারণা চাকরির বাজারের নিরন্তর পরিবর্তনশীল ল্যান্ডস্কেপে মূল্য যোগ করছে। আমাদেরকে সঠিক অবস্থানে সঠিক ধারণা রাখতে হবে, উদ্ভাবনী উপায়ে ও গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ আইপি ফোরাম থেকে তরুণ প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দিতে এবং সমর্থন করতে সবসময় প্রস্তুত।“
সানজিদা খন্দকার বলেন, ‘দ্য টু আওয়ার জব’ বিশ্বাস করে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দক্ষ নারীর জন্য ঘরে বসেই চাকরির সুযোগ তৈরি করে দিবে। সেইসঙ্গে সাশ্রয়ী পারিশ্রমিকে পেশাদার কর্মী পেতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকেও সাহায্য করবে। একজন নারী তাঁর সময়, সুযোগ-সুবিধামতো সংসারের পাশাপাশি চাকরি করবে, ক্যারিয়ার গড়বে, নিজ যোগ্যতায় আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। সংসার জীবনে অন্যের উপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করবে।
উল্কা গেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামিলুর রশিদ বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের তৈরি গেমস বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ১৮ কোটির ও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। খন অনলাইন ও অফলাইন ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে আয় হচ্ছে। মূলত গেমের অ্যাড, সাবস্ক্রিপশন ও ইন-অ্যাপ পারচেজ থেকে এই আয় হয়ে থাকে। আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দেই। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুধু মাত্র উল্কা গেমস লিমিটেড ই বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ মোট ৪.৯৮ কোটি টাকা দিয়েছে; ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ১১ কোটি ছোঁয়ার আশা করি। সঠিক পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো অনেক গেমিং স্টুডিও এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও সরকারের রাজস্ব আয়ে অবদান রাখবে।“