আগামী ১৮ জুন প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জাতীয় সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ইক্যাবের ২০২২-২৪ দ্বি-বার্ষিক কার্য নির্বাহী কমিটির নির্বাচন। দুই দফা নির্বাচনে মিলবে ৯ সদস্যের নির্বাচিত কমিটি। এর আগে ২০১৬-২০১৮ সাল মেয়াদে প্রথম বারের মতো তফসিল ঘোষণা করা হলেও এ পর্যন্ত একবারও তা ব্যালট পর্যন্ত পৌঁছে নি। ফলে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটাই হবে কার্যত প্রথম ভোট। তবে ভোটের সেই উত্তাপ ছাপিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ফি নিয়ে।
নির্বাচন বোর্ড ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে সভাপতি পদে আড়াই লাখ টাকা, সহ-সভাপতি পদে দেড় লাখ টাকা, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থসম্পাদক পদে ৭৫ হাজার টাকা এবং পরিচালক পদের জন্য মনোনয়ন ফি বাবদ ৫০ হাজার টাকার অফেরতযোগ্য জামানত দিতে হবে।
যদিও ই-ক্যাব নির্বাচনে সবসময় পরিচালক পদেই নির্বাচন হয়ে থাকে। এরপর নির্বাচিত ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে পদবন্টন করে থাকেন। তাই পদ ভিত্তিক আলাদা ফি কিভাবে এলো বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে জানা যায়নি। তবে নির্বাচন বোর্ডের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বোর্ডের সিদ্ধান্তেই এই তফসিল ও নিয়মাবলী ঘোষণা করা হয়েছে। আজ আবেদন পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিগগিরি এ বিষেয়ে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এদিকে শুক্রবার সকালে বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচন বোর্ড চেয়ারম্যান আমিন হেলালীর কাছে আবেদন করেছেন ধাঁনসিডি ডিজিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমান সভাপতি শমী কায়সার। একই দাবি তুলেছেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ তমালও।
এ বিষয়ে ফেসবুকে মোনোনয়ন পত্র আবেদন ফি পুনোঃবিবেচনার আবেদন পত্র সংযুক্ত করে ই-ক্যাবের গ্রুপে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে তিনি লিখেছেন, “এবার ই-ক্যাবের ইলেকশনে সবার সতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য আমিও নির্বাচন ফি কমানোর পক্ষে। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যদিও সদস্যদের অনুরোধে গতবারের ফি ৭০ হাজার থেকে এবার ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে, কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত অভিমত এটা আরও অনেক কমানো উচিত। সবার অংশগ্রহণে আসন্ন ইলেকশন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে এটাই প্রত্যাশা।”
জানাগেছে, সংগঠনকে শক্তিশালী করার স্বার্থে নির্বাচন ব্যয় নির্বাহের জন্য গত নির্বাচনের আগে বিষয়টিকে এতোটা গুরুত্ব দেয়নি বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। তবে এবার সাধারণের মধ্যে নেতৃত্বে আসার আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে বর্তমান কমিটিই সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। তারা দাবি উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে এখন বিষয়টি ই-ক্যাব গ্রুপে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে। গ্রুপ ছাড়িয়ে এই আলোচনা পৌঁছে গেছে গন্ডির বাইরেও।
এ নিয়ে দেয়া পোস্টে বিডিওএসএন সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান লিখেছেন, বাংলাদেশের সকল ব্যবসায়িক সংগঠন সমূহের নির্বাচনের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে দামী (???) মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের ফী ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে “বাংলার অ্যামাজনের পছন্দের ও পৃষ্ঠপোষককৃত” সমিতি ই-ক্যাব।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও মনোনীত সদস্যদের মাধ্যমেই সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছিল সংগঠন। তবে ২০২০ সালে শমী-তমালের নেতৃত্বে ১৪টি স্ট্যান্ডিং কমিটি দিয়ে জাতীয় প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি শক্ত অবস্থান করে নেয় ই-ক্যাব। এরপর থেকেই ডিজিটাল বাণিজ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে এর নেতৃত্ব। অনেকের মধ্যেই ই-ক্যাব নেতা হওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে দুইটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্র ভাবেও কাউকে কাউকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আভাস পাওয়া গেছে। তবে কেউ এখনো প্রকাশ্যে আসছেন না। তবে ই-ক্যাব ইফতার মাহফিলে কুশল বিনিময়ের সময় নতুন নেতাদের অনেকরই নিজেদের বিষয়টি সদস্যদের সামনে তুলে ধরেছেন।
নির্বাচন তফশীল অনুযায়ী, ১৯ এপ্রিল ছিলো সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা পরিশোধের শেষ দিন। ২১ এপ্রিল প্রকাশ করা হয় প্রাথমিক ভোটার তালিকা। এই তালিকায় রয়েছে ৭৮৩জন ভোটারের নাম। আগামী ১০ মে প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এরপর ১১ মে থেকে শুরু হবে মনোনয়ন বিতরণ। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে ২৯ মে পর্যন্ত। আর ভোট গ্রহণ ও পদ বণ্টন শেষে আগামী ২ জুলাই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটি।