প্রায় ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের পাওনা ফেরত না দেয়ার অভিযোগ পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল কমার্স সেল। এর মধ্যে ৩৪-৩৫টির মতো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তবে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা গ্রাহককে ফেরত দিতে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে এপ্রিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ফের সতর্ক করেছেন তিনি।
সোমবার (২১ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শ্রেষ্ঠ ডটকম এবং আলিফ ওয়ার্ল্ডের পেমেন্ট গেটওয়েতে গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাণিজ্য সচিব।
অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ ডটকমের ১১ জন গ্রাহকের ১৭ লাখ টাকা এবং আলিফ ওয়ার্ল্ডের ২১ জন গ্রাহকের ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সফিকুজ্জামান বলেন, যারা পাওনাদারদের টাকা ফেরত দিচ্ছে কাছে ২০ কোটি টাকার মতো পেন্ডিং আছে, তারা দুই কোটির মতো টাকা ফেরত দিতে পারবে। বাকি টাকা কীভাবে ফেরত দেবে? পরে হয় তো আরও একটা জটিলতায় পড়বে, এই একটা ভয় হয়তো কাজ করছে। কিন্তু বিষয়টা হলো তাকে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতেই হবে। সে যদি কামব্যাক করতো, বিজনেসে ফিরে আসার জন্য যে সাপোর্টগুলো দরকার আমরা দিতাম।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট গেটওয়ে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, কিন্তু তারা (পেমেন্ট গেটওয়ে অপারেটর) স্লো হয়ে যাচ্ছে। কী কারণে তারা স্লো হয়ে যাচ্ছে? তাদের তো স্লো যাওয়ার কথা না। এখানে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি দিচ্ছি। আমার পে, সূর্য পে এবং বড় আরও একটি প্রতিষ্ঠান, তাদের বিষয়ে আমাদের দেখা দরকার। এই পেমেন্ট গেটওয়েগুলো যদি হাওয়া হয়ে যায় তাহলে তো আর কিছু থাকবে না। সে জন্য আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি।
সরকার কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠানের জন্য ই-কমার্স ব্যবসা বন্ধ করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ই-কমার্স দেশের জন্যই চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে এখন আর আগের মতো কেউ এই ব্যবসা নিয়ে যাতে প্রতারণা করতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারি রাখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর ৩১ মার্চের মধ্যে যারা যোগাযোগ করে পজিটিভলি অংশগ্রহণ না করবে, তাদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে তালিকা দিয়ে দেব। তারা মানুষকে এখনো কোনো আশার বাণী শোনায়নি এবং তারা দেশে হয়তো লুকিয়ে আছে বা গা ঢাকা দিয়ে আছে।
সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতেই হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ব্যবসা করতে ফিরে আসে, সব সহযোগিতা আমরা করব। ১০ দিনের মধ্যে যোগাযোগ না করলে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে তালিকা দেব।’
তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে আমরা টেকনিক্যাল কমিটির মিটিং করে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। সেটা হচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে আইনগত যে ব্যবস্থা আছে তা আমাদের সংস্থাগুলো নেবে। কিন্তু যে টাকাগুলো আটকে আছে, পেমেন্ট গেটওয়েগুলোকে আমরা নির্দেশনা দিয়ে দেবে যেন আটকে থাকা টাকা সাত দিনের মধ্যে গ্রাহকদের কাছে চলে যায়। সে ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৪টি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রয় আদেশ দেওয়ার পর বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।