‘নিরাপদ ইন্টারনেট সম্মেলন’ থেকে রবিবার নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার জেনেছেন যশোরের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী-অভিভাবক। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির উদ্যোগে যশোর জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপস্থিতির অধিকাংশই ছিলো যশোরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী।
জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি ও সাইবার টিনস এর আয়োজনে এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহায়তায় দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের শুরুতেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ও সাইবার নিরাপত্তা লিফলেট বিতরণ করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব মো: সামসুল আরেফিন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামান ও যশোরের পুলিশ অব ইনভেস্টিগেশনের এসপি রেশমা শারমিন। যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোছা: খালেদা খাতুন রেখার সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্ষুদে সাংবাদিক সুবহা সাফায়েত সিজদা, লজিক আই ফরেনসিক এর ফাউন্ডার মেহেদী হাসান, মেক অ্যা টিমের প্রতিষ্ঠাতা আমির হামজা জিহাদ, এপোলো গেমের কনটেন্ট ক্রিয়েটার নয়ন হোসেন ও সাইবার টিনস এর প্রতিষ্ঠাতা সাদাত রহমান।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য এনসিএসএ, সাইবার টিনস এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। স্বাগত বক্তা, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের শিক্ষার্থীদের বিশেষ সতর্ক হতে হবে। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের অনলাইন কার্যক্রম বিষয়ে সচেতন থাকতে পরামর্শ প্রদান করেন।
সম্মেলনে লজিক আই ফরেনসিক এর ফাউন্ডার মেহেদী হাসান তার আলোচনায় বিভিন্ন সাইবার অপরাধ এবং সাইবার আক্রমণ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং মোবাইলের মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন সাইবার ক্রাইমের উদাহরণ দিয়ে উপস্থিত সকলকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা করা, অপরিচিত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব, বন্ধুদের সাইবার বুলিং করা থেকে বিরত থাকতে হবে মর্মেও অনুরোধ জানান।
ক্ষুদে সাংবাদিক সুবহা সাফায়েত সিজদা তার আলোচনায় বলেন, প্রত্যেক জিনিসের ভাল মন্দ দুইটি দিক আছে। তেমনি ইন্টারনেটেরও ভাল মন্দ দুইটি দিকই আছে। আমাদের উচিত ইন্টারনেটকে ভালো কাজে ব্যবহার করা। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই ইন্টারনেটে পড়াশোনা করেছে, সিলেবাস শেষ করেছে। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেড়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাদাত রহমান তার আলোচনায় সাইবার বুলিং এর বিভিন্ন উদাহরণ উপস্থাপন করে তা প্রতিরোধে করণীয় তুলে ধরেন এবং কিশোর-কিশোরীরা সাইবার বুলিং এর শিকার হলে হটলাইন নম্বর ১৩২১৯ এ অবহিত করতে বলেন। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কুইজ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন এবং উপস্থিত অতিথিদের মাধ্যমে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিশেষ অতিথি পিবিআই এর পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, ইন্টারনেটে মেয়েরা বেশী সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি ছেলেরাও সাইবার ক্রাইমের ভুক্তভোগী। বর্তমানে সাইবার ক্রাইমের মামলার হার অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে বলে মতামত প্রদান করেন। সাইবার জগতে সংঘটিত বিভিন্ন হয়রানির উদাহরণ দেন এবং ব্যক্তিগত কন্টেন্ট যেমনঃ ভিডিও, ছবি শেয়ার করতে নিষেধ করেন । উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটকে ভালো কাজে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
বিশেষ অতিথি জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক সরকারের বিভিন্ন অনলাইন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছার সাথে সাথে সাইবার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে মর্মে মতামত প্রদান করেন এবং সাইবার নিরাপত্তায় জোর দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সকল নাগরিক সাইবার সচেতন হলেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সরকারের একার পক্ষে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধই একজন কোমলমতি শিক্ষার্থীকে অপরাধ জগৎ থেকে দূরে রাখতে পারে। তিনি অপরিচিত কোন নম্বরের ভিডিও কল রিসিভ না করার জন্য পরামর্শ দেন। এছাড়া, নতুন পাশকৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর প্রয়োজনীয়তা এবং সাইবার নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পাশাপাশি জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি এর বিভিন্ন কার্যক্রম এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি আইসিটি বিভাগের সন্মানিত সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন নিরাপদ ইন্টারনেট সম্মেলনে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দেন এবং শিক্ষার্থীদের নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখবে এবং অভিভাবকগণ তাদের সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি এনসিএসএর সাথে ইন্টারনেট সম্মেলন আয়োজনের জন্য সাইবার টিনসকে ধন্যবাদ দেন এবং সাইবার টিনস সাইবার বুলিং এর শিকার শিক্ষার্থীদের পাশে সর্বদা থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ সাইবার বুলিং, সাইবার নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত ডাটা সুরক্ষা এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন উপস্থাপন করেন। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ, আলোচকবৃন্দ এবং এনসিএসএ’র কর্মকর্তাগণ উক্ত প্রশ্নসমূহের সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করেন। পরিশেষে, সম্মেলনের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বলেন, আমাদের দেশে স্মার্ট প্যারেন্টিং এর অভাব রয়েছে। অভিভাবকদের মাঝে শেয়ারিং এন্ড কেয়ারিং এর খুবই ঘাটতি রয়েছে মর্মে মতামত প্রদান করেন। তিনি বয়ঃসন্ধি সময়ের বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে বলেন। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভালো কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারে পরামর্শ প্রদান করেন।