ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির পরিবর্তে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করলো সরকার। সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে, সরকার এ এজেন্সি গঠন করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত গেজেট জারি করে তা অবিলম্বে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গেজটটিতে সই করেছেন আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
আর এই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের সঙ্গে সঙ্গে আগের আইন অনুযায়ী গঠিত ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি বাতিল করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করেছিল সরকার।
বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) সংশোধন, পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৭ আগষ্ট ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩’ এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিলো মন্ত্রিসভা। তখনমন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ২০১৮ সালে করা হয়েছিল। এই পাঁচ বছরে আইনের আলোকে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সারা বিশ্বে আইসিটি সংক্রান্ত যে অবয়ব ছিল, সেটিও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আইসিটি সংক্রান্ত অপরাধের ব্যাপ্তি ও ধারার পরিবর্তন হয়েছে। সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রেখে “সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩” প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন কার্যকর করার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান ডিএসএ রহিত হয়ে যাবে।’
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তা কার্যকর হয়। এ আইনে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের কথা রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে— এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার একজন মহাপরিচালক ও বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত সংখ্যক পরিচালকের সমন্বয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি নামে একটি এজেন্সি গঠন করবে। এজেন্সির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকবে।
তবে সরকার প্রয়োজনে ঢাকার বাহরে দেশের যেকোনও স্থানে এজেন্সির শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। এজেন্সি প্রশাসনিকভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত দফতর হিসেবে থাকবে। এজেন্সির ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কার্যাবলি বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে বলেও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই আইনে
আইনে ডিএসএর ১২টি ধারা সংশোধন করে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। ধারাগুলো হলো ১৮, ২০, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৬। এর মধ্যে ১৮ ধারায় অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে বা প্রবেশ করতে সহায়তা করে, তাহলে ১৮ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী, ওই ব্যক্তির ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকার জরিমানা হবে। একই অপরাধ পুনরায় করলে মূল অপরাধের জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে তার দ্বিগুণ দণ্ড হবে।
ডিএসএর ২০ ধারায় কম্পিউটারের সোর্স কোড পরিবর্তন, ২২ ধারায় ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিকস জালিয়াতি, ২৩ ধারায় ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিকস প্রতারণা, ২৪ ধারায় পরিচয় প্রতারণা ও ছদ্মবেশ ধারণ, ২৫ ধারায় আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য উপাত্ত প্রেরণ প্রকাশ, ২৬ ধারায় অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার, ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংগঠন, ২৮ ধারায় ওয়েবসাইট ও কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন তথ্য প্রকাশ ও সম্প্রচার, ২৯ ধারায় মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার, ৩১ ধারায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধ ও দণ্ডের বিধান রয়েছে।