বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড তাদের একটি জনপ্রিয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্সের অর্ধেক অনলাইনে উন্মুক্ত করেছে, যেটা শেখাবেন স্ট্যানফোর্ড অধ্যাপকেরা। ‘কোড ইন প্লেস’ নামের এই অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এই প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার কোর্সে অংশ নিতে পারবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিচ ল্যাব ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্ট হলো কোড ইন প্লেস। স্ট্যানফোর্ডের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের দুজন অধ্যাপক, ক্রিস পিচ ও মেহরান সাহামি এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা।
করোনার কারনে এক বছর বন্ধ থাকার পর বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের এই অনলাইন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার কোর্সটি আবারও শুরু করেছে। ছয় সপ্তাহের এই অনলাইন কোর্সের কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে একটি করে বিষয়ের একাধিক ভিডিও ক্লাস করতে হয়। ছয় সপ্তাহের বিষয়বস্তুতে রয়েছে—কন্ট্রোল ফ্লো উইথ কারেল, দ্য আর্ট অব কোডিং, কনসোল প্রোগ্রামিং, আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভেরিয়েবল, গ্রাফিক্স এবং লিস্ট ও ডিকশনারি। এর ভিডিও ক্লাসগুলো নিজের সময়মতো করে দেখে নেওয়া যায়। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে একজন ‘সেকশন লিড’ বা মেন্টরের সঙ্গে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে হয়। এটি সেকশন লিডের সময় অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়। কোর্স চলাকালীন অনুশীলন ছাড়াও তিনটি অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। কোর্স শেষে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে নিজের একটি প্রকল্পও সম্পন্ন করতে হয়। সম্পূর্ণ কোর্সটি পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
এ কোর্সটি অবশ্যই ছয় সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একাধিক ভিডিও ক্লাস ছাড়াও একজন মেন্টরের তত্ত্বাবধানে অনলাইনে রিভিউ করার সুযোগ আছে। কোন কোন সময় স্ট্যানফোর্ডের ছাত্ররা এই অনলাইন রিভিউ কোর্সের মেন্টর হিসেবেও কাজ করেন।
কোড ইন প্লেস কোর্সের মাধ্যমে পাইথন প্রোগ্রামিং শেখার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, এই কোর্স করার মাধ্যমে প্রোগ্রামিং এ দক্ষ হয়ে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক অর্জন করেছে। সাধারণত আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোন নির্দিষ্ট কোর্স শুরু করলেও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারনে শেষ করতে পারেনা। কিন্তু এই কোর্সটি যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে হবে এবং সেকশন লিডারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ রয়েছে, তাই শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যে থেকে কোর্সটি শেষ করতে পারবে। আর এই কোর্সের জন্য কোনো টাকা খরচও হবে না।
এর আগে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে মোট ২২ হাজার শিক্ষার্থী এই কোর্সের মাধ্যমে পাইথন প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি নিয়েছেন। তাঁদেরকে মেন্টরিং করেছেন ২ হাজার ২০০ জন সেকশন লিড। শিক্ষার্থী হওয়া ছাড়াওএই কার্যক্রমের শিক্ষক বা মেন্টর হিসেবে যুক্ত হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাঁরা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখছেন কিংবা এর আগে যাঁরা কোড ইন প্লেসের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরাও এই প্রকল্পে সেকশন লিড হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। সেকশন লিডদের পাইথন প্রোগ্রামিংয়ের লিস্ট ও ডিকশনারি পর্যন্ত দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে সেকশন লিডদের ‘আর্ট অব কম্পিউটার সায়েন্স টিচিং’-এর ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থী কিংবা সেকশন লিড হিসেবে এই অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য এই ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের শেষ তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩। বাংলাদেশ থেকেও এই কোর্সের শিক্ষার্থী কিংবা সেকশন লিড হিসেবে এই অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবে। এই প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের একজন অধ্যাপক ক্রিস পিচ কোর্সের অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থী, সেকশন লিড ও পাঠক্রম প্রণেতাদের অভিনন্দন জানান। সেই সঙ্গে তিনি চলতি ব্যাচে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহীদের আহ্বান জানিয়েছেন।